চট্টগ্রামে শিশুছাত্রকে বেধড়ক মারধর করা মাদ্রাসা শিক্ষকের শাস্তি চান না শিশুটির মা-বাবা। ওই শিক্ষককে আটকের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তারা এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা না নিতে লিখিত অনুরোধ করেন। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) বিকাল ৫টার দিকে হাটহাজারী উপজেলার মারকাযুল কোরআন ইসলামিক অ্যাকাডেমিতে এই ঘটনায় ঘটে। ওই মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ ইয়াহিয়া হেফজ বিভাগের ছাত্র মো. ইয়াসিন ফরহাদকে বেদড়ক পিটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষক ইয়াহিয়া তার ছাত্র ইয়াসিন ফরহাদকে মাদ্রাসার বাইরে থেকে ধরে একটি কক্ষে নিয়ে বেত দিয়ে বেধড়ক পেটান।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষক হাফেজ ইয়াহিয়া তার এক ছাত্রকে বেদড়ক পিটিয়েছেন। ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নজরে আসার পর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমি থানা পুলিশসহ ওই মাদ্রাসায় গিয়ে হাফেজ ইয়াহিয়াকে আটক করি।’
এদিকে, ইয়াহিয়াকে আটক করা হলেও তার বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি। শিশুটির মা-বাবা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনও ব্যবস্থা নিতে রাজি হননি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘অভিযুক্ত মাদরাসা শিক্ষককে আটক করার পরপরই নির্যাতিত শিশুটির মা-বাবা আমার কাছে এসে কান্নাকাটি শুরু করেন। দুইজন আমার অফিসে এসে ওই শিক্ষককে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। তারা ওই শিক্ষককে ক্ষমা করে দিয়েছেন জানিয়ে হাফেজ ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করবেন না বলে জানান। আমি তাদের অনেক বোঝানোর পরও তারা মামলা করতে রাজি হননি। উল্টো তারা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে আমাকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছেন। পরে আমরা ওই শিক্ষককে ছেড়ে দিয়েছি।’
লিখিত চিঠিতে শিশুটি মা-বাবা উল্লেখ করেন, ‘মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় ফরহাদকে দেখতে মাদ্রাসায় যাই। দেখা করে চলে আসার সময় ফরহাদ আমাদের পেছনে পেছনে ছুটে আসে। এরপর হেফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ ইয়াহিয়া এসে ফরহাদকে ধরে নিয়ে যায়। রুমে নিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়েছে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এই ঘটনায় আমরা দুই জন খুবই মর্মাহত। এরপরও আমরা আমাদের সন্তানের শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করবো না। তাই আটককৃত শিক্ষককে ছেড়ে দেওয়ার বিনীত অনুরোধ করছি।’
কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন না এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিশুটির বাবা জয়নাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত কোনও স্বার্থ থেকে তিনি আমার সন্তানকে মারধর করেননি। যিনি আমরা সন্তানকে পড়িয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত মনে হয়নি। তাই তাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছি।’
নির্যাতিত শিশুটির পরিবার না চাইলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে সাক্ষী প্রয়োজন। সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। এ কারণে ওই শিক্ষককে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’