আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুই মসজিদে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে অর্ধশত মানুষকে হত্যার দায়ে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী ব্রেন্টন ট্যারেন্টকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে সে দেশের একটি আদালত। খবর রয়টার্স।
এর প্রায় দেড় বছর আগে ঘটে যাওয়া ওই হত্যাকাণ্ডের মামলায় রায় ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) আদালত বলেছে, ব্রেন্টন যা করেছেন, কোনো মানুষের তা করার কথা না। এদিকে, ২৯ বছর বয়সী ওই অস্ট্রেলিয়ান নাগরিককে প্যারোলে মুক্তির সুযোগও না রেখে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক, যা নিউজিল্যান্ডের আইনে সর্বোচ্চ সাজা।
পাশাপাশি, দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম কাউকে এই শাস্তি দেওয়া হল বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। ট্যারেন্টের আগে নিউজিল্যান্ডে উইলিয়াম বেল নামে তিন খুনের এক আসামিকে প্যারোল ছাড়া ৩০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সেটাই ছিল এতদিন সে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম মেয়াদের কারাদণ্ড।
এ ব্যাপারে ক্রাইস্টচার্চের উচ্চ আদালতের বিচারক ক্যামেরন মান্ডার বলেছেন, আসামি ব্রেন্টন ট্যারেন্ট যে অপরাধ করেছেন, তার শাস্তি হিসেবে নির্দিষ্ট মেয়াদের সাজা যথেষ্ট নয়। তবে, কয়েদির ধূসর রংয়ের পোশাক পরা, রক্ষীদের ঘেরাওয়ের মধ্যে থাকা ট্যারেন্ট রায় ঘোষণার পর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি।
অন্যদিকে, দুই মসজিদে গুলি চালিয়ে ৫১ হত্যা, ৪০ হত্যাচেষ্টা এবং সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছিল ব্রেন্টন ট্যারেন্টের বিরুদ্ধে। আদালতে শুনানির সময় তিনি সব দায় স্বীকার করে নেন। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৫ মার্চ জুমার নামাজের সময় মসজিদে হত্যাযজ্ঞ চালানোর ওই দৃশ্য নিজের হেলমেটে লাগানো ক্যামেরার মাধ্যমে ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করেছিলেন এই শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদী, যা পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।
অপরদিকে, ক্রাইস্টচার্চের আল নূর ও লিনউড মসজিদের পর তৃতীয় আরেকটি মসজিদে হামলা চালানোর পরিকল্পনাও তার ছিল। মসজিদগুলো পুড়িয়ে দিয়ে যত বেশি সম্ভব মানুষকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন তিনি – এমন তথ্য উঠে আসে এ মামলার শুনানিতে।
ক্রাইস্টচার্চের ওই হামলায় মৃতদের মধ্যে পাঁচজন ছিলেন বাংলাদেশি। হামলায় আহত আরও তিন বাংলাদেশিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে দীর্ঘদিন। নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কয়েকজন খেলোয়াড়ও সেদিন আল নূর মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। সফরের বাকি ম্যাচ বাতিল করে ফিরে আসেন তারা।