তিমির বনিক মৌলভীবাজার থেকে: ধান রোপণে মানুষ নয়, ধান রোপণ করছে যন্ত্র। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার নামক এই আধুনিক কৃষি যন্ত্র একসাথে ৬ লাইনে ধানের চারা রোপণ করতে পারে। শ্রমিকও লাগে কম। খরচও কম।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় সোমবার (৩১ জানুয়ারি) রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণের উদ্বোধন করেছেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে আয়োজনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার খন্দকার মুদাচ্ছির বিন আলীর সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন বড়লেখা উপজেলা চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, বড়লেখা থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম সরদার, দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আজির উদ্দিনসহ জনপ্রতিনিধি, কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা। চলতি রবি মৌসুমে সরকারের কৃষি প্রণোদনা কর্সূচির আওতায় বড়লেখা উপজেলায় ৫০ একর জমিতে ব্লক প্রদর্শনীতে সমলয়ে চাষাবাদ (Synchronize Cultivation) পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে হাইব্রিড জাতের বোরো ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে। কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়।
রাইস ট্রান্সপ্লান্টার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। দেশ এগিয়ে যাচ্ছেন তাই আমাদেরকেও কৃষিতে এগিয়ে যেতে হবে। রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে খুব দ্রুত সময়ে ধানের চারা রোপন করা সম্ভব। তাছাড়াও খরচ অনেক কম এবং লোকবল খুব কম প্রয়োজন হয়। আর এই পদ্ধতিতে ধান রোপন করলে ধানের ফলনও অনেক ভালো হয়।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়- এই যন্ত্র দিয়ে একসাথে ৬ লাইনে ধানের চারা রোপণ করা যায়। যন্ত্রটি একসাথে ১২টি ট্রে বহন করে চালাতে পারে। সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে কমপক্ষে চারজন শ্রমিককে কাজ করতে হয়। এতে করে কৃষকদের অধিক মুজুরি গুণতে হয়।
যন্ত্র দিয়ে এক ঘন্টায় ০.৩৫ হেক্টর জমির ধান রোপণ করা যায়। জ্বালানি খরচ ঘণ্টায় সাতশ’ গ্রাম। প্রতি হেক্টর জমিতে ২০ জন শ্রমিকের সাশ্রয় হয়। এ যন্ত্র দিয়ে ধানের চারা রোপণ করলে কৃষকের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে। চারা রোপণে যন্ত্রটি ব্যবহার করলে রোপণ খরচ ৫০-৭৫ ভাগ কমানো সম্ভব হবে।
এছাড়া রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা রোপণ করলে লাইন সোজা হয়। ফলে পরবর্তীতে আগাছা নিংড়ানো, সার ও কীটনাশক ছিটানো ও ধান কাটা সহজ হয়।
এক ঘন্টায় ৫০ ডেসিমাল ধানের চারা রোপণ : রাইস ট্রান্সপ্লান্টার চালক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়- “রাইস ট্রান্সপ্লান্টার”-এর একাধিক চালক বলেন, এই মেশিন নিয়ে ৫০ ডিসিমাল ধানের চারা রোপণ করতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা। আর এতে প্রতি ডিসিমালে তেল খরচ হয় ১০ থেকে ১২ মিলিলিটিার। অল্প সময়েই মধ্যেই ধানের চারা রোপণ করা যাবে। এতে কৃষদের ৮০ ভাগ খরচ কমে যাবে। যদি ৩৩ ডেসিমালে শ্রমিক দিয়ে ধানের চারা রোপণ করানো হয়, তাহলে প্রায় এক হাজার টাকা খরচ হবে। আর যদি রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে চারা রোপণ করা হয় তাহলে মাত্র ২০০ টাকা খরচ হবে। যন্ত্র কিনতে ভর্তুকি দেবে সরকার। কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “বর্তমানে ফসল উৎপাদন করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না। এর মূল কারণ শ্রমিকের দাম অনেক বেড়ে গেছে। চারা লাগানো ও কাটার মৌসুমে শ্রমিকের মুজুরি অনেক বেশি হয়। একজন শ্রমিক যে ধান কাটে তাতে কৃষকের লাভ হয় না। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কৃষিতে ধান লাগানো ও কাটা দুটোই মেশিনে করা হবে। সরকার ওইসব যন্ত্রে অর্ধেক ভর্তুকি দিবে। এছাড়াও উপকুল ও হাওর অঞ্চলে তিনভাগের দুই ভাগ ভর্তুকি দিবে সরকার। এই বছর যন্ত্র কেনার জন্য কৃষকদের চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হবে। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে ইতিমধ্যে সারাদেশে ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার’ এর ব্যবহার সুফল সম্পর্কে কৃষককদের অবহিত করা ও যন্ত্রটি ক্রয় করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।”
রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনেরদাম জানা গেছে- একটি রাইস ট্রান্সপ্লান্টার মেশিনের দাম ৪ লক্ষ টাকা। কিন্তু হাওরাঞ্চলের কৃষক সেটা পাচ্ছেন ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় । আর বাকী ৭০ ভাগ খরচ ভুতূর্কি হিসেবে দেবে সরকার।