
তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে মতো কর্মবিরতি ও সড়ক অবরোধ করেন চা শ্রমিকরা। গতকাল মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার রত্না চা-বাগানে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় নিয়ে চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবি দীর্ঘদিনের। মজুরি বৃদ্ধির এ দাবি না মানায় এবার তিন দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রমিকরা। গত মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে ফাঁড়িবাগানসহ ২৩২টি চা-বাগানে এ কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। এদিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কয়েকটি স্থানে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
দাবি আদায় না হলে আগামীকাল শুক্রবার অর্ধদিবস এবং পরবর্তী সময়ে লাগাতার কর্মবিরতির হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও বিভিন্ন ভ্যালির যৌথ সিদ্ধান্তে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
কর্মসূচি সফল করতে মৌলভীবাজারের জুড়ী ভ্যালিতে গত রবিবার ৩৪টি চা-বাগান পঞ্চায়েতের মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের জুড়ী ভ্যালির সভাপতি কমল ব্যানার্জীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দি, জুড়ী ভ্যালির সহ-সভাপতি শ্রীমতি বাউরী, সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার পাল প্রমুখ।
এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা বাগান, খাইছড়া চা-বাগান ও ফুলছড়া চা-বাগান ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকরা চা-বাগানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে দাঁড়িয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন। ভাড়াউড়া চা-বাগানের শ্রমিকরা কর্মবিরতিকালে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, ‘প্রায় দুই বছর ধরে কত আন্দোলন, সংগ্রাম করে যাচ্ছি, চা-বাগান মালিকপক্ষ টালবাহানা করেই যাচ্ছে। প্রতিটি শ্রমিকদের পরিবারের খরচ বেড়েছে। আমরা বারবার বাগান মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছি, কোনো সমাধানে আসছে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাঁদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে আগামীকাল শুক্রবার অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। এর পরও যদি মালিকপক্ষ সিদ্ধান্তে না আসে পরবর্তী সময়ে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হবে।’
কালীঘাট চা-বাগানের শ্রমিক চম্পা তাঁতী বলেন, ‘দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা পাই। শুনেছি বাগান মালিকরা আরো ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩৪ টাকা দেবে বলছে। আমার প্রশ্ন, দিনে ১৩৪ টাকায় কিভাবে আমার বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে জীবন চলবে?’
ভাড়াউড়া চা-বাগানের নারী শ্রমিক সাধু হাজরা বলেন, ‘সব কিছুর দাম বাড়ে, আমার মজুরি বাড়ে না।’
ভাড়াউড়া চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নুর মিয়া বলেন, ‘শ্রমিকদের এক দিনের মজুরি দিয়ে এক লিটার পেট্রলও কেনা সম্ভব হবে না।’
বাংলাদেশীয় চা সংসদের সিলেট ব্র্যাঞ্চ চেয়ারম্যান এবং ফিনলে টি কম্পানির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, ‘যেহেতু মজুরি বোর্ড কাজ করছে, সেহেতু হঠাৎ করে শ্রমিকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি অযৌক্তিক।’
কুলাউড়া, এদিকে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে মৌলভীবাজারের জুড়ী ও লংলা ভ্যালির ৭০টি চা-বাগানে তৃতীয় দিনের মতো শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। বুধবার সকাল ৯টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা এ কর্মবিরতি পালিত হয়। এ সময় কয়েকটি স্থানে শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার মোট ৩৬টি বাগানে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে।