দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। শনিবার সন্ধ্যায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্ণেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। যেখানে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের জন্য কোনো স্থান নেই। তাদের কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য কোনো পরিবেশ নেই। যদিও সরকার বার বার গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু সেটা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বঙ্গবন্ধু নিজেও সারাজীবন গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছেন। ১৬ বছর জেল খেটেছেন। কিন্তু এখন আমাদের দেশেই গণতন্ত্র নেই।
তিনি বলেন, এই দেশের পুলিশ, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের হয়ে কাজ করছেন। এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যারা ক্ষমতায় আছে তারা যদি মনে করে তারা চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে সে ধারণা ভুল। কারণ পৃথিবীতে এমন ঘটনা কখনো ঘটেনি। আমরা যদি কখনো ক্ষমতায় যাই আমাদের প্রথম চিন্তা করতে হবে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা। এটা না হলে আমাদের ছেলেমেয়েরা ভোগান্তির শিকার হবে।
অলি আরও বলেন, আজকে কেউ ঘর থেকে বের হলে আবার ঘরে ফিরবে কিনা সে নিশ্চয়তা নেই। গত এক-দেড় বছর যাবৎ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ। করোনার কারণে ৩০ ভাগ মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। সরকার বড় বড় প্রকল্প হাতে নিচ্ছে আর বড় বড় দুর্নীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত ১০ বছরে এরকম দুর্নীতি চলছে । এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, গণতন্ত্রের সাথে পুনরায় ফিরে আসেন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।
তিনি বলেন, আমি আশা করবো আমাদের মধ্যে যে বিভেদ কাজ করছে কেউ জামায়াত, কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ বিএনপি কেউ এলডিপি। এরা কেউ কাউকে দেখতে পারে না। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। আমাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। আগামীর সুন্দর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ করতে হবে। আমরা যারা রাজনীতি করি তাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে।
জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এ সরকার দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। সম্প্রতি সুনামগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলাকে কেন্দ্র করে একটা দলের ওপর দোষারোপ করা হচ্ছে। কিন্তু এই ঘটনায় সরকার দলের লোকেরাই জড়িত ছিল। অন্যান্য দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটা নিয়মে পরিণত হয়েছে যে, বাংলাদেশ কোনো কিছু ঘটলেই ইসলামপন্থী দলগুলোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত ছাড়াই সামাজিক চার্জশিট দিয়ে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, দেশ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে আমাদের দল যে কোনো ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত। আসুন আমরা সকলেই নিজেদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলি। সবাই মনে রাখবেন, যতোদিন আমাদের মধ্যে ভাগ বিভক্তি চলবে ততোদিন অপশক্তি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। এটা দেশের ভেতরে হোক আর বাহিরে হোক। তাই আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপশাসন থেকে মুক্ত হতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতারা।
উৎসঃ মানবজমিন