দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ক্ষমতাসীনদের প্রত্যাখ্যান করেছে : নুর

গণঅধিকার পরিষদের (নুর) সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, ক্ষমতাসীনদের দেওয়া পরিসংখ্যানই বলে দেয় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। সোমবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন।

নুর বলেন, ‘সিইসি বেলা ৩টার সময় একবার বললেন ২৮ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। এর এক ঘণ্টা পর বললেন, ৪০ শতাংশ। প্রকৃত অর্থে ১০ শতাংশ ভোট পড়েছে কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে। আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, লোকজন ভোট না দিলেও এরা ৬০ শতাংশ কি ৪০ শতাংশ ভোট মিলিয়ে দেখাবে। কাজেই ভোট কত শতাংশ পড়েছে, কারা ভোট দিয়েছে, কারা প্রার্থী হয়েছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করার অবকাশ নাই। এই নির্বাচনই অবৈধ। অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে জনমতের বাইরে এই ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে। তর্কের খাতিরে আপনাদের (সরকার) কথা যদি ধরেও নিই যে ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে, তাহলেও তো সংখ্যাগরিষ্ঠ ৬০ শতাংশ মানুষ আপনাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। কীভাবে বলেন জনগণ আপনাদের ভোট দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের গণদাবি উপেক্ষা করে জনবিচ্ছিন্ন সরকার দেশে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েমে ভারতীয় মদদে এই একতরফা নির্বাচন করেছে। নিজেরা নিজেরা নির্বাচন করেছে সেখানেও কেন্দ্র দখল, জবরদস্তি করে ব্যালটে সিল মারা, শিশুদের দিয়ে ভোটদান, গোলাগুলি, মানুষ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। দেশের ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ ভোট বর্জন করে এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে।’

নুরুল হক নুর বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পর্যায়, রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থায় সর্বত্র ভারতীয় লোক রয়েছে। যারা দেশকে ভারতের তাবেদার রাষ্ট্র বানাতে চায়। ৭ জানুয়ারি ফেলানি হত্যা দিবস, সেই দিন কেন নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হলো। আগে-পরেও তো করা যেত। ফেলানি হত্যাসহ সীমান্ত হত্যার কথা মানুষের মন থেকে ভুলিয়ে দিতেই ৭ জানুয়ারি ফেলানি হত্যা দিবসে ভারতীয় মদদে এই প্রহসনের ভোটের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। ৬৩টি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করেছে। ২০১৪ ও ১৮ সালে ভোটের পর সেভাবে আন্দোলন হয়নি। বিএনপিসহ সকলকে বলব, এবার আর ভুল করা যাবে না। ৮০ থেকে ৯০ ভাগ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আন্দোলনের গণ-অভ্যুত্থানেই এই সরকারের পতন হবে। বিএনপিসহ নির্বাচন বর্জনকারী সকল দলকে নিয়ে নতুনভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। আমরা রাজপথে আছি, বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ থেকে ফিরব না।’

দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, ‘এখন বিরোধী দল খোঁজা হচ্ছে। কে হবে বিরোধী দল, জাতীয় পার্টি নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা? এমনও হতে পারে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিয়ে আওয়ামী লীগ বিরোধী দল বানাতে পারে। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বলছে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, তবে উত্তর কোরিয়া মডেলে নির্বাচন হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে। এটা কোনো নির্বাচন? শুধু ভোটের অধিকারের জন্য পাকিস্তান দুই ভাগ হয়েছে। এখন গণতন্ত্র হরণের জন্য আমাদের কী করা উচিত? এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আমাদের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’

গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন- গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, আব্দুজ জাহের, অ্যাডভোকেট সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, জসিম উদ্দিন আকাশ, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, সহস্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা রবিউল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ, সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসান, পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারিকুল ইসলাম, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা সম্পদ প্রমুখ।

Facebook Comments Box
Share: