প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তোলাটাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে নবীন বিসিএস কর্মকর্তাদের দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি দেশবাসীকে উন্নত ও সুন্দর জীবন দেয়ার লক্ষ্যে তাঁর সরকারের অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি চাই তরুণ অফিসাররা তাদের মনন ও বুদ্ধিমত্তাকে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করবে। তারা দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতেও বিশেষ দৃষ্টি দেবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে বিসিএস কর্মকর্তাগণের ৭৩তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, (বিপিএটিসি) সাভার এ আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন সহ আরো ৫টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশ ব-দ্বীপ অঞ্চলের একেক জায়গার সমস্যা একেক রকম। সেগুলো নিরূপন করে সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে। উন্নয়নটা সবসময় যাতে টেকসই হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
তাঁর সরকার দারিদ্রের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ দরিদ্র থাক সেটা আমি চাইনা।
ইতোমধ্যে হতদরিদ্র ভূমিহীন গৃহহীনদের মাঝে বিনামূল্যে ঘর-বাড়ি করে দেয়ায় তাঁর সরকার পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিবের এই বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ তাঁর মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হবে, সেটাই আমি চাই এবং দেশে কোন ভূমিহীন বা গৃহহীন যেন না থাকে।
প্রধানমন্ত্রী কোন এলাকায় গৃহহীণ বা ভূমিহীন ব্যক্তি সরকারের গৃহ নির্মাণ করে দেয়ার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে কিনা তা খুঁজে দেখার জন্যও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে শুধু গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছি তাই নয়, তাদের জীবন-জীবিকারও ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কাজেই আমি চাই আপনারা যারা নতুন হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হবেন তারাও এই বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখবেন। দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যার পক্ষে যতটুকু সম্ভব সেভাবেই আপনারা কাজ করে যাবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাই দেশের মানুষ উন্নত জীবন পাবে, সুন্দর জীবনের অধিকারি হোক এবং সে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জন প্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কোর্সে বিশেষ কৃতিত্ব অর্জনকারি তিন কৃতী শিক্ষার্থীর হাতে পদক ও সনদ তুলে দেন। শেখ রায়হান আকবর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর নিকট থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে রেক্টর’স পদক গ্রহণ করেন। জোবায়দা ফেরদৌস দ্বিতীয় এবং আব্দুল্লাহ আল রাজী তৃতীয় হন।
৬ মাস ব্যাপী এবারের কোর্সে মোট ৪৬১ জন অংশগ্রহণ করেন। যারমধ্যে ১১৯ জন মহিলা।
অনুষ্ঠানে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম বক্তৃতা করেন। বিপিএটিসি’র রেক্টর রমেন্দ্র নাথ বিশ^াস স্বাগত বক্তৃতা করেন। সনদ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দুজন শিক্ষার্থী আই মোহাম্মদ হাসান এবং ফারজানা ইয়াসমিন নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
৭৩তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষন কোর্সের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্রও পরিবেশিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, জনগণের সেবায় নিবেদিত ও দক্ষ এবং পেশাদারি মনোভাব সম্পন্ন জনপ্রশাসন গড়ে তোলাটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। কেননা তিনি চান জনগণ যেন সবকিছুতে সম্পৃক্ত থাকে, সেজন্য মন্ত্রণালয়ের নামটিও তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় করে দিয়েছেন বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের সেবা দেয়াটা আমাদের সকলের সাংবিধানিক কর্তব্য এটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে। কাজেই জাতির পিতার সেই আদর্শ ধারণ করেই আপনারা কাজ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সম্পাদিত জাতির পিতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার (স্পেশাল ব্রাঞ্চের) রিপোর্ট নিয়ে প্রকাশিত বই ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এর সিরিজ বইগুলো এবং জাতির পিতার লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন গ্রন্থটিও প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের পড়ে দেখার আহবান জানান।
তিনি বলেন, এই সিরিজগুলোতে যদি একটি চোখ বোলানো যায়- তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসকে জানা যাবে, সংগ্রাম সম্পর্কে জানা যাবে, সর্বপরি সমগ্র বাংলাদেশ সম্পর্কে জানা যাবে। অন্যদিকে ‘আমার দেখা নয়া চীন’ গ্রন্থ থেকে সেখানকার নারীর ক্ষমতায়ন বা নারীদের অবস্থা বা সমাজের অনগ্রসর লোকদের অবস্থা, কৃষক-শ্রমিকের অবস্থা সম্পর্কে জাতির পিতার অনুধাবন ও মূল্যায়ন সম্পর্কে সম্মক জ্ঞান লাভ সম্ভব হবে।
বিশে^র সাথে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আসন্ন্ ৪র্থ শিল্প বিপ্লবকে ঘিরে আইসিটি নির্ভরতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে এবং আমাদেরকে সে ধরনের দক্ষ জনবলও গড়ে তুলতে হবে।
তিনি এক্ষেত্রে কোর্সে নিজের গ্রামকে অন্তর্ভূক্ত করায় কোর্স সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কেননা আমরা যদি নিজের গ্রামকেই ভালভাবে না চিনি তাহলে মাটি ও মানুষের প্রকৃত সেবাটা সম্ভব হবেনা।
প্রধানমন্ত্রী আমাদের রপ্তানী পণ্যের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজার খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি যে অঞ্চলে যে পন্য উৎপাদন হয় সেখানকার নির্দিষ্ট বিশেষ রপ্তানী প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলে সে ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, যেখানে সেখানে শিল্প কারখানা করা যাবে না। ১শ’টি শিল্প অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, কৃষি জমি যেনো না কমে যায় সেদিকে দেখতে হবে। অঞ্চল ভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে যে শিল্পের কাঁচামাল বা কৃষি পণ্য উৎপাদিত হয়, সে ধরণের শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী নবীন প্রশাসসিক কর্মকর্তাদের সেবা ও জনকল্যাণের মানসিকতা নিয়েও কাজ করে যাবারও আহবান জানান।
তিনি বলেন, এদেশটা আমাদের- কাজেই এদেশের মানুষের কল্যাণ করাটা সকলের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সেই ধারাটা সবসময় মনের মধ্যে থাকতে হবে। মানুষের সেবক হতে হবে। জনগণের সেবক হতে হবে। কেননা জনগণের সেবা করাটাই সব থেকে বড় কথা। সেভাবেই আপনারা কাজ করে যাবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তৃণমূলের মানুষ যদি ভালো থাকে, দেশের অর্থনীতির অগ্রগতি হবেই। এটা কেউ থামাতে পারবে না। তা চিন্তা করেই আওয়ামী লীগ সরকার দেশের উন্নয়নে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন এই অঞ্চলের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার পর আবারও সেই বৈষম্য ফিরে আসে। সেখান থেকে জাতিকে মুক্তি দেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
যেখানে জাতির পিতা বলে গেছেন- আজকে যতটুকু অর্জন এদেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষ রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ঘাম ঝরিয়েইতো তা অর্জন করেছে। সেখান থেকেই তো বেতন ভাতা আমাদের সবকিছু হয়। তাদের ভাগ্য আমরা কেন পরিবর্তন করব না- সে প্রশ্নও উত্থাপন করেন তিনি।
তিনি বলেন, করোনার পর ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ এবং একে ঘিরে স্যাংশন ও পাল্টা স্যাংশনে দেশের মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কাজেই সেই কষ্ট কতটুকু আমরা লাঘব করতে পারি, আমাদের সকলের সেই প্রচেষ্টাটাই থাকবে।
সরকার প্রধান বলেন, আজকে উন্নত দেশগুলোও হিমসিম খাচ্ছে, তারপরেও আমাদের যেটুকু সামর্থ ও শক্তি আছে- তা দিয়ে জনগণের সেবা আমরা করে যাব। এই কথাটা মনে করেই আপনাদের চলতে হবে।