অবৈধভাবে অর্জিত দুই হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচারের অভিযোগে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত এবং তার ভাই ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ বিভাগ (সিআইডি)।
গত শুক্রবার রাজধানীর কাফরুল থানায় বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং আইনে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন সিআইডি পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) এসএম মিরাজ আল মাহমুদ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বরকত ও রুবেল গত ১০ বছরে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তারা ২০১০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ফরিদপুরের বিআরটিএ, এলজিইডি, সড়ক বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসা ও জোর করে ভূমি দখল করে এই অবৈধ সম্পদ করেছেন। বর্তমানে তাদের এসি-নন এসি মিলিয়ে ২৩টি বাস, বোল্ডার, ড্রাম ট্রাক, বিলাসবহুল পাজারো গাড়ি রয়েছে। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে দুই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
এজাহারে আরো বলা হয়, অতীতে এ দুই ভাইয়ের সম্পদ বলতে কিছুই ছিল না। তারা শুধু রাজবাড়ীর এক বিএনপি নেতার সঙ্গী ছিলেন। ১৯৯৪ সালের ২০ নভেম্বর রাজবাড়ীর ওই এলাকায় এক আইনজীবীকে হত্যার ঘটনা ঘটে। সেই হত্যা মামলায় এ দুই ভাইও আসামি ছিলেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিমুজ্জামান বলেন, বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মানি লন্ডারিং আইনের মামলাটির তদন্তকাজ করবে সিআইডি। কারণ মামলাটি তারাই দায়ের করেছে।
এ বিষয়ে সিআইডির পরিদর্শক এসএম মিরাজ আল মাহমুদ বলেন, প্রথমে বরকত ও রুবেলকে মানি লন্ডারিং মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। পরে তাদের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে। গত ১৮ জুন এ ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে তিনি জানতে পারেন, গত ১০ বছরে এই দুই ভাই বিপুল পরিমাণ সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জন করেছেন। যার মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করেছেন।
এদিকে আজ রোববার দুটি পৃথক চাঁদাবাজির মামলায় শুনানি শেষে বরকত ও রুবেলের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ফরিদপুর ১ নং আমলি আদালতে বিচারক হাকিম মো. ফারুক হোসাইন। এর আগে আরো চারটি মামলায় ২০ দিন করে রিমান্ডে ছিলেন এই দুই ভাই।
এর আগে এই একই আদালতে চাঁদাবাজি ও অস্ত্র মামলায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বরকত ও রুবেল। এর মধ্যে বরকত চাঁদাবাজির মামলায় এবং রুবেল অস্ত্র মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
গত ১৬ মে রাতে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহল্লার মোল্লা বাড়ি সড়কে অবস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহার বাড়িতে পর পর দুই দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পরদিন ১৮ মে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা। এই মামলার আসামি হিসেবে বরকত ও রুবেলসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ৭ জুন ফরিদপুর শহরের বদরপুরসহ বিভিন্ন মহল্লায় অভিযান চালিয়ে তাদের অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেপ্তার করা হয়।