ভারত তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে গত ১১ বছর ধরে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করলেও এবারের সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ নিয়ে বড় কোনও আশ্বাস দেননি।
শনিবার (২৭ মার্চ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন, তবে তিনি (নরেন্দ্র মোদি) এটার বিষয়ে খুব একটা উত্তর দেননি। তিনি বলেছেন, তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ। তবে কবে, কোথায় এটি হবে, সে বিষয়ে মোদি স্পষ্ট করে কিছুই বলেননি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতের ইতিবাচক মনোভাব আছে। কিন্তু কবে তারা এটি দেবে, সেটির তারিখ ঠিক করা যায়নি। উনাদেরও কিছুটা অসুবিধা আছে। সেজন্য তারা বলতে পারছেন না যে, আগামী সাত দিনের মধ্যে এটি পেয়ে যাবেন। তারা বারবার অঙ্গীকার করেছেন যে, চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে— সেটি তারা গ্রহণ করবেন।’
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তিস্তা চুক্তি না হওয়ার ফলে ওখানে মরুভূমি হয়ে গেছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘তবে আমরা আশাবাদী এটি হবে। সবগুলো নদীর নাব্য বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) বলেছেন। তাই শুধু তিস্তা না, আরও অনেক নদীর নাব্য বাড়ানো হবে।’
প্রসঙ্গত, দুদিনের সফরে ২৬ মার্চ ঢাকায় আসেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতা সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে যোগদানের পাশাপাশি সাতক্ষীরায় যশোরেশ্বরী মন্দির, টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি সমাধি ও ওরাকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের মন্দির পরিদর্শন করেন।
সীমান্তে হত্যাকাণ্ড
সীমান্তে হত্যাকাণ্ড নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘উভয় সরকারপ্রধান সম্মত হয়েছেন যে, তারা সীমান্তে একটি হত্যাও দেখতে চান না। সে কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির জন্য সীমান্ত হাটের প্রস্তাব দিয়েছেন।’
সীমান্তে হত্যাকাণ্ড একতরফা নয় জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমাতে হবে। একজনকে খালি গালি দিলে হবে না। মাদক, গরু চুরি এগুলো কমাতে হবে। এটি একতরফা না। আমাদেরও কাজ করতে হবে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমাতে হবে।’
অর্থনৈতিক সহযোগিতা
২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হতে চায় এবং ভারতের অংশীদারিত্ব প্রয়োজন বলে মনে করে ঢাকা।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত হতে চাই এবং এটি একা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য ভারতের অংশীদারিত্ব চাই।’
বাংলাদেশ কানেক্টিভিটির নেতৃত্ব দেবে এবং রাস্তা, রেলওয়ে, নৌপথ সবদিক দিয়ে কানেক্টিভিটি চাই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ত্রিপুরার মানুষ চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। অপরদিকে সৈয়দপুর আঞ্চলিক বিমানবন্দর করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।’
মৈত্রী দিবস
১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় ভারত। ওই দিনকে ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যে জানান, ‘বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উৎসব যৌথভাবে উদযাপনের বিভিন্ন পরিকল্পনাও দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় স্থান পায়। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে (শেখ হাসিনাকে) ২০২২ সালে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।’
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি অংশে ভারতের সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ বলে জানান মন্ত্রী। বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে নির্গমন সংক্রান্ত পাঁচটি প্যাকেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ভারতীয় সৈনিকদের স্মরণে আশুগঞ্জে নির্মিতব্য স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
উদ্বোধন
মোদির সফরকালে দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে চারটি বিষয়ের উদ্বোধন ও উন্মোচন করেছেন। সেগুলো হচ্ছে— তিনটি বর্ডার হাট, শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্র ভবন, ঢাকায় বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তীর স্মারক ডাকটিকিট।
সমঝোতা স্মারক
এবারের সফরে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ন্যাশনাল ক্যাডেট কর্পস, বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল সার্ভিস, রাজশাহী কলেজে স্পোর্টস ফ্যাসিলিটি তৈরি ও ট্রেড সুবিধাকরণ ব্যবস্থা।