এজাজ মাহমুদঃ তিউনিসিয়া উপকূলে গত মঙ্গলবার নৌকাডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬৮ জন বাংলাদেশিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৩ জন।
এছাড়া এর আগের দিন ডুবতে যাওয়া নৌকা থেকে উদ্ধার হওয়া ১১৩ অভিবাসীর মধ্যে ৫২ জন বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গাজী মো. আসাদুজ্জামান কবির গতকাল শুক্রবার রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের খোঁজ নিতে বর্তমানে তার নেতৃত্বে ত্রিপোলি দূতাবাসের একটি দল তিউনিসিয়ায় অবস্থান করছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার তিউনিসিয়ার এসফ্যাক্স উপকূলে ঝড়ের কবলে সাগরে ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে ৯০ জন অভিবাসী ছিলেন। যার মধ্যে ৮১ জনই বাংলাদেশি। দেশটির নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড বাংলাদেশিসহ ওই নৌকায় থাকা ৭৭ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করেছে। বাকি নয় জন নাইজেরিয়া ও মরক্কোর নাগরিক। তারা লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন।
প্রথমে ৩৩ জন বাংলাদেশি উদ্ধারের কথা জানানো হলেও পরের গণনায় ৩২ জন বলে নিশ্চিত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার আরও ৩৬ জন বাংলাদেশি উদ্ধারের কথা জানিয়েছিল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ। গত মঙ্গলবার তিউনিসিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোহাম্মদ জেকরি জানিয়েছিলেন, তিউনিসিয়ার সমুদ্রে তেলের খনিতে কর্মরত শ্রমিকরা একটি নৌকা ডুবে যেতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে তারা বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। খবর পেয়ে তিউনিশিয়ার নৌবাহিনীকে উদ্ধার কাজের জন্য পাঠানো হয়।
উদ্ধার হওয়া ৩২ জন বাংলাদেশিকে তিউনিশিয়ার দ্বীপ শহর জারবায় (Djerba) রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও হদ্রাবুবল অফশোর গ্যাস ক্ষেত্রে আশ্রয় নেওয়া ৩৬ বাংলাদেশিকে নৌবাহিনী সরিয়ে নিয়ে প্রথমে এসফ্যাক্স (Sfax) শহরে নৌঘাঁটিতে নেয়। পরে দুজনকে হাসপাতালে এবং বাকিদের জাতীয় গার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে তিউনিসিয়ার বার্তা সংস্থা টিএপি জানায়।
বাংলাদেশিসহ উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার আইওএম এবং রেড ক্রিসেন্টের তত্ত্বাবধানে জারবা ও এসফ্যাক্স শহরের হোটেলে রাখা হয়েছে। করোনা বিধির কারণে তাদের সবাই সাত দিনের কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন এবং পিসিআর পরীক্ষাও করা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা এখন জারবায় অবস্থান করছেন। এরই মধ্যে তারা সেখানের হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকা ৩২ বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে তাদের বিস্তারিত পরিচয় এবং ঘটনা সম্পর্কে জেনে নিয়েছেন।
তবে, এসফেক্সে থাকা ৩৬ বাংলাদেশির খোঁজ নিতে পারলেও তাদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের মধ্যে দুজনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ সরাসরি সাক্ষাতের অনুমতি দেয়নি। এ তথ্য জানিয়ে চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গাজী মো. আসাদুজ্জামান কবির বলেন, ‘আমরা আইএমও ও রেড ক্রিসেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। জারবায় থাকা ৩২ জনের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, বিস্তারিত জেনেছি। সবাই শারীরিকভাবে মোটামুটি সুস্থ আছেন।’
তাদের কাছ থেকে জানা যায়, প্রায় দুমাস আগে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই হয়ে লিবিয়া পৌঁছেন। ১৭ মে লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে জাওয়ারা এলাকা থেকে তারা নৌকা নিয়ে ইউরোপের দিকে যাত্রা করেন। একটানা ১৬ ঘণ্টা উত্তাল সাগর পাড়ি দেওয়া পর আচমকা তারা ঝড়ের কবলে পড়েন এবং তাদের নৌকা ডুবে যায়। পরে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড তাদের উদ্ধার করে।
উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের বয়স ১৮ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে। তাদের বেশিরভাগই মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স।
এর আগে সোমবার তিউনিসিয়ার উপকূলে ডুবতে যাওয়া আরেকটি নৌকা থেকে দেশটির নৌবাহিনী ১১৩ জনকে উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে ৫২ জন বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত করেছেন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স। বাকিরা মরক্কো ও সাব-সাহারা আফ্রিকার অধিবাসী। তাদের মেদরিন শহরে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত বলে অভিবাসনে বেশ কড়াকড়ি রয়েছে। তাই উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশিদের সেখানে অবস্থানের কোনো সুযোগ নেই। আইওএমের মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
অবৈধভাবে যারা ইউরোপে প্রবেশ করতে চান, তাদের জন্য সুবিধাজনক জায়গা লিবিয়া। বাংলাদেশ থেকে অনেকে নানা উপায়ে লিবিয়া পৌঁছে নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালির পথে যান। তাদের মধ্যে অনেকেরই সাগরে ডুবে মৃত্যুও হয়েছে।
এজাজ মাহমুদ: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক