তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে পুনর্বহালের দাবিতে দায়ের করা আপিলের নবম দিনের শুনানি আজ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১০টায় শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ শুনানি পরিচালনা করছে।
২১ অক্টোবর থেকে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। ২২ অক্টোবর দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ হওয়ার সময় রিটকারী বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বক্তব্য শেষ করেন।
এর আগে, গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় চ্যালেঞ্জ করার অনুমতি দেয় আপিল বিভাগ এবং পরবর্তী শুনানির জন্য ২১ অক্টোবর তারিখ নির্ধারণ করে।
সেদিন আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।
শুনানিকালে প্রধান বিচারপতি বলেন, “শুধু সাময়িক সমাধানের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দিতে চায় না আদালত; বরং নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর সমাধান খোঁজা হচ্ছে, যা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।”
তিনি আরও জানতে চান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে তা কখন থেকে কার্যকর হবে।
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, গত দেড় দশকে জনগণ শাসনের বদলে নানা ধরনের শোষণের শিকার হয়েছে— গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাজনৈতিক নিপীড়নের মধ্য দিয়ে। তিনি দাবি করেন, এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধেই জনগণের গণঅভ্যুত্থান হয়েছে এবং তাদের ক্ষমতাকে উপেক্ষা করলে আবারও বিপ্লবের আশঙ্কা থাকে।
পটভূমি
• ১৯৯৬ সালে সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যুক্ত হয়।
• ১৯৯৮ সালে এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়, কিন্তু ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তা খারিজ করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করে।
• পরে ২০০৫ সালে আপিল দায়ের হলে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে।
• এরপর সংসদে পাস হয় পঞ্চদশ সংশোধনী, যার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয়।
• আওয়ামী লীগের অধীনে পরবর্তী তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
• ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার দাবি আবারও জোরালো হয়।
বর্তমান রিভিউ আবেদনগুলি
২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রথম রিভিউ আবেদন করেন। পরবর্তীতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথকভাবে আবেদন করেন।
মোট চারটি রিভিউ আবেদনই এখন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির আওতায় রয়েছে।
