
অপহরণের চারদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল থেকে দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপহৃত ২ ব্যক্তি হলেন, মোহাম্মদ আব্দুল জলিল ও হেফাজ উদ্দিন।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় শাহবাগ থানা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম তাদেরকে ঢাবির হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৫৪৪ নম্বর কক্ষ থেকে উদ্ধার করেন। এই ঘটনায় ৫৪৪ নম্বর কক্ষটি হল প্রশাসন সিলগালা করে দিয়েছেন।
প্রক্টরিয়াল টিম সূত্রে জানা যায়, ব্যবসার জন্য শাহাবুদ্দিন নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকা ধার নেন জলিল। কিন্তু টাকা ফেরত চাইলে তিনি নানান বাহানা করে টাকা দিতে দেরি করছিলেন। তাই শাহাবুদ্দিন ১০-১২ জন নিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে আব্দুল জলিলকে তার হাতিরঝিল থানার হাজিপাড়ার বাসা থেকে অপহরণ করেন। এ সময় তার সঙ্গে থাকা হেফাজ উদ্দিনকেও অপহরণ করা হয়। তাদেরকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলে এবং পরবর্তীতে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৫৪৪ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়।
এই ঘটনায় ৫৪৪ নম্বর রুমের তিন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত শনাক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন– ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক ও ফিন্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আবুল হাসান সাইদি, ছাত্রলীগের মুহসীন হল শাখার উপ-প্রচার সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুনতাসির হোসাইন এবং একই হলের উপ-ত্রাণ ও দুর্যোগ সম্পাদক আল শাহরিয়ার মাহমুদ তানসেন। অভিযুক্ত মুনতাসির শাহাবুদ্দিনের আত্মীয় বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে প্রক্টরিয়াল টিম।
আব্দুল জলিল বলেন, শাহাবুদ্দিন আমার থেকে ৩৫ লাখ টাকা পান। কিন্তু মাঝখানে ওনার সাথে আমার যোগাযোগ হয় না। পরে আমাকে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ২টায় বাসা থেকে ১০-১২ জন তুলে আনেন।
তিনি আরও বলেন, আমাকে বিভিন্ন স্থানে মারধর করা হয়েছে। গত তিন দিন ধরে হলে আটক করে রাখা হয়েছে। আমাকে যে মারা হচ্ছে আমি ভয়ে চিৎকারও করতে পারছিলাম না।
ভুক্তভোগী আব্দুল জলিলকে মারধর করা হয়েছে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার সাব-ইনসপেক্টর আল আমিন। তিনি বলেন, তার শরীরে মারধরের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে কক্ষটি (৫৪৪) খুঁজে আমরা তেমন কোনো অস্ত্র পাইনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা প্রথমে পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারলাম, মুহসিন হলে চার বা পাঁচ তলায় আমাদের কয়েকজন ছাত্রের সহযোগিতায় একজনকে তুলে আনা হয়েছে। টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে তাকে মারধরও করা হয়েছে। পরে শাহবাগ থানা ও হল প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করি। জড়িত ও ভুক্তভোগীদের জড়ো করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। এতে সকল ঘটনা বেরিয়ে আসে। বাংলাদেশের আইন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী এদের বিচার হবে। বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের অপরাধমূলক কাজে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে থাকবে। ভুক্তভোগীকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা আগেই একটি জিডি করেছে। তার ভিত্তিতে এখন মামলায় যাবে।
তিনি আরও জানান, জড়িতদের হাতিরঝিল থানায় পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিধি রয়েছে, তা প্রয়োগ করে হল প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।