বরগুনা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে তরমুজ পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। তরমুজ কিনতে আসা পাইকারদের অভিযোগ, সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের পরীরখাল এলাকায় স্থানীয় মনির ও মিলন নামের দু’জন ব্যক্তির নেতৃত্বে টাফি (পরিবহন ট্রাক্টর) প্রতি দুটি করে তরমুজ চাঁদা বাবদ আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পাইকারদের কয়েকজন বরগুনা সদর থানা ও স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশের কাছে অভিযোগও করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবছর করোনার কারণে প্রথম দিকে পাইকার না এলেও সরকারি নির্দেশনা মেনে ঢাকা, বরিশাল, যশোরসহ বেশ কিছু অঞ্চল থেকে পাইকাররা তরমুজ কিনতে এসেছেন। তারা সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাঠ থেকেই তরমুজ কেনেন। মাঠ থেকে তরমুজ রাস্তায় আনতে টাফি (ট্রাক্টর) ব্যবহার করে থাকেন। স্থানীয় মনির হোসেন ও মিলন নামের দুই ব্যাক্তি তরমুজ ট্রাকে ভরার আগে টাফি প্রতি তাদের কাছে প্রথমে ৫টি করে তরমুজ দাবি করে। পরে স্থানীয় কৃষকদের জোরাজুরিতে তারা ২টি করে তরমুজ চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে পাইকাররা অপরাগতা প্রকাশ করলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দেওয়া হয়।
পাইকার লিটন বেপারী বলেন, ‘টাফি থেকে ট্রাকে তরমুজ লোড করার সময় স্থানীয় মনির হোসেন ও মিলন নামের দু’জন ব্যক্তি ও তাদের কয়েকজন সহযোগী টাফি প্রতি দুটি করে তরমুজ তাদেরকে দিতে হবে এমন দাবি করেন। প্রথম দিকে তাদেরকে তরমুজ দিতে অস্বীকৃতি জানালে এক পর্যায়ে তারা জোর করে বড় সাইজ দেখে দুটি করে তরমুজ নিয়ে নেন। তরমুজ দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় উল্টো তাদের মারধরের হুমকি দেয় ওই ব্যক্তিরা।’
আকরাম নামের আরেক পাইকার বলেন, ‘আমরা এখান থেকে ৩০ লাখ টাকায় তরমুজের ক্ষেত কিনেছি। কিন্তু স্থানীয় কিছু লোকজন চাঁদা হিসেবে জোর করেই আমাদের গাড়ি থেকে তরমুজ নিয়ে যায়। আমরা দূরের মানুষ, তাদের কাছে একপ্রকার জিম্মি ও অসহায়।’ একই অভিযোগ পাইকার ইব্রাহীম, সাইফুল, রহিম ও ইমরানের।
সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ক্ষেত থেকে তরমুজের টাফি আসার সঙ্গে সঙ্গে মনির ও মিলন নামের দুজন ব্যক্তি সেখান থেকে দুটি করে তরমুজ উঠিয়ে আনতে চেষ্টা করেন। এসময় রিপন বেপারী বাধা দিলে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে যান। এক পর্যায় এখান থেকে তরমুজ লোড করতে দেওয়া হবে বলে মনির হুমকিও দেন। পরে প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেয়ে মনির ও মিলন ওই স্থান ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে মনিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চাঁদা হিসেবে তরমুজ আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জমি ব্যবহার করে তরমুজ লোড দেওয়া হয়, এতে আমাদের জমির ক্ষতি হয়। যে কারণে ক্ষতিপূরণ বাবদ তাদের কাছ থেকে তরমুজ চেয়েছিলাম। এটা জোর জবরদস্তি নয়, ক্ষতিপূরণ দাবি।’
স্থানীয় কয়েকজন তরমুজ চাষি জানান, ওই জমি মনির বা মিলনের না, জমির মালিক লিটন নামের একজন ব্যক্তি। তিনি এসবের সঙ্গে জড়িত নন, বরং তার জমির ভূয়া মলিক সেজে মনির ও মিলনসহ কয়েকজন ব্যক্তি পাইকারদের কাছ থেকে তরমুজ আদায় করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার কয়েকজন তরমুজ চাষি বলেন, এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এখানে এসব কাজ হয়। পাইকাররা দূর দূরান্ত থেকে এসেছেন। তারা ট্রাক লোড করার সময় মনির ও মিলন এবং স্থানীয় আরও কয়েকজন ব্যক্তি জোর করেই তরমুজ নিয়ে যান। এমন অবস্থায় চলতে থাকলে পাইকাররা আর এখানে তরমুজ কিনতে আসবে না, এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যোগাযোগ করা হলে জমির মালিক লিটন মিয়া বলেন, ‘আমার জমি ব্যবহার করে টাফি থেকে তরমুজ ট্রাকে লোড করা হয়। আমি এ নিয়ে পাইকারদের কাছে কোনও টাকা বা কিছু দাবি করিনি। বরং মনির ও মিলনকে নিষেধ করায় তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছে , ‘আপনি চুপ থাকেন, যা করার আমরা করবো।’
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দেখার জন্য স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তরমুজ চাষি বা পাইকরা কাউকেই হয়রানি করার কোনও সুযোগ নেই। আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি।’
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন