পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের পায়রা সেতুতে টোল আদায় নিয়ে সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য কাজী কানিজ সুলতানা হেলেনের ছেলে তাজ হোসেন তালুকদারের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে টোলপ্লাজায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পটুয়াখালী ও দুমকি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে রাতভর পুলিশ হেফাজতে রেখে শুক্রবার দুপুরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাজী কানিজ সুলতানা হেলেন এমপির বড় ছেলে মাহিন হোসেন তালুকদার জয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে নববধূ নিয়ে বরিশাল থেকে পটুয়াখালীর দিকে যাচ্ছিল একটি গাড়ি বহর।
পায়রা সেতু পার হয়ে টোলপ্লাজায় এসে টোল পরিশোধ না করেই যেতে চাইলে বাধার মুখে পড়েন তারা।
এ সময় এমপির ছেলে তাজ তার মায়ের বরাত দিয়ে টোল পরিশোধে আপত্তি জানান। এ নিয়ে প্লাজার লোকজনের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হন তিনি।
সংঘর্ষে টোলপ্লাজার সিকিউরিটি গার্ড ইনচার্জ মো. রাসেল, টোলের ইলেক্ট্রিশিয়ান মো. রাসেল ও টোল আদায়কারী সদস্য সবুজ, বাবু এবং তাজের এক বন্ধু আহত হন।
এর মধ্যে সিকিউরিটি গার্ড রাসেল ও এমপিপুত্রের বন্ধু কিশোর মারাত্মক জখম হন। পরে রাসেলকে দুমকি উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পায়রা সেতু টোলপ্লাজার ইনচার্জ মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে কানিজ সুলতানা হেলেন এমপির বরাতে পাঁচটি গাড়ি বিনা টোলে সেতু পার হয়। একই গাড়ির বহর সন্ধ্যায় বরিশাল থেকে পটুয়াখালীর দিকে আসতে টোলপ্লাজায় আসে। এ সময় প্লাজায় দায়িত্বরত লোকজন টোল চাইলে এমপির ছেলে ও বন্ধুরা টোল দেওয়া যাবে না বলে জানান। গাড়িতে কানিজ সুলতানা হেলেন ও এমপির স্টিকার না থাকায় তাদের টোল দিতে বলা হয়। এ নিয়ে তর্ক হলে টোলপ্লাজার লোকজনকে মারধর করেন এমপিপুত্র ও তার বন্ধুরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি বলেন, পুলিশের উপস্থিতিতে এমপিপুত্র তাজ ও তার বন্ধুরা আমাকেও মেরেছে। পরে পুলিশ নিরাপত্তার জন্য আমাকে প্রশাসনিক ভবনের ওপরে নিয়ে গেলে আমি রক্ষা পাই।
তবে অপর একটি সূত্র বলছে, ঘটনার সময় এমপির বরাত দিয়ে টোলপ্লাজায় কথা বলতে চাইলে টোলের লোকজন কানিজ সুলতানা হেলেনকে কটাক্ষ করে কথা বলেন। এ কারণে এমপির লোকজন রাগান্বিত হন এবং সংঘর্ষ বাধে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে তাজ হোসেন তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কানিজ সুলতানা হেলেন এমপি দাবি করেন, টোল পরিশোধ নিয়ে নয়, নববধূর স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিতেই টোলের লোকজন এ কাণ্ড ঘটিয়েছে। টোলের নামে ওরা নৈরাজ্য ও ডাকাতি করছে। বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে অনেক ব্যস্ত আছি, পরে এর ব্যাখ্যা দেব।
দুমকি থানার ওসি মো. আবদুস সালাম বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ অভিযোগ করেনি। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। নিরাপত্তার জন্য তৌহিদ ও স্থানীয় যুবক কাইউমকে থানা হেফাজতে রেখে শুক্রবার দুপুরে ছেড়ে দিয়েছি।
পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পায়রা সেতু এলাকা দুমকি থানার আওতায়। তাই বিষয়টা তারা দেখবে। আমরা খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে চলে এসেছি।
বাউফল-দুমকি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার শাহেদ চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আসলে ভুল বোঝাবুঝি ও অধৈর্যের কারণে এটা হয়েছে, যা আমাদের কাম্য নয়।
উৎসঃ যুগান্তর