ভারতের কেরালায় এক বাংলাদেশি তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতন ও গণধর্ষণের ঘটনায় দুই নারীসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে দেশটির স্থানীয় পুলিশ। নির্যাতিতা ওই তরুণী আর্থিক সচ্ছলতার জন্য কথিত বন্ধু রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়ের সঙ্গে ভারত হয়ে দুবাই যেতে চেয়েছিলেন। টিকটক হৃদয় ঢাকার মগবাজার এলাকা থাকেন। তরুণীর বাবা সেখানে শরবত বিক্রি করেন। তরুণীর সঙ্গে এক বছর ধরে পরিবারের যোগাযোগ নেই বলেও জানান তার বাবা।
এদিকে নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি মনিটরিং করে বাংলাদেশের পুলিশও। । ভিডিওতে দেখা যাওয়া পাঁচ নির্যাতনকারীর ছবি প্রকাশ করে তাদের সম্পর্কে তথ্য চেয়ে পুরস্কার ঘোষণা করে ভারতের আসাম পুলিশ। পরে বেঙ্গালুরু পুলিশ বৃহস্পতিবার ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেফতার করে।
এর আগে নির্যাতনকারী এক যুবকের ছবির সঙ্গে ফেসবুকে রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়ের ছবি মিলে যায়। পরে তার পরিবারের লোকের মাধ্যমে হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগ করা হয়। পরে নির্যাতিত মেয়েটির পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে বৃহস্পতিবার রাতে সেই তরুণীর বাবা রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় রিফাদুলসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও চারজনকে আসামি করে মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ২২ বছর বয়সী তার বড় মেয়েকে কয়েক বছর আগে বিয়ে দেন। প্রায় সাড়ে তিন বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে তার। বছর তিনেক আগে তার জামাতা কুয়েতে চলে যান। এরপর থেকে মেয়ে শ্বশুরবাড়ি এবং ঢাকায় তার বাসা মিলিয়ে থাকতেন। একপর্যায়ে জামাতা যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তারপর বছর দেড়েক আগে মেয়ে দুবাইয়ে যাবেন বলে তাকে জানান। কার মাধ্যমে দুবাইয়ে যাবেন জানতে চাইলে মগবাজার এলাকার বন্ধু হৃদয়ের মাধ্যমে ভারত হয়ে দুবাইয়ে যাবেন বলে জানান।
মেয়েকে বিদেশে যেতে বারণ করেছিলেন জানিয়ে মেয়েটির বাবা বলেন, এরপর প্রায় এক বছর তাঁর মেয়ের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। আত্মীয়স্বজনদের কাছে গিয়েও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে মেয়ের কথিত বন্ধু হৃদয়ের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, রিফাদুল ইসলাম হৃদয়সহ অপর আসামিরা তাদের কাউকে না জানিয়ে মেয়েকে দুবাইয়ে পাঠানোর কথা বলে পাচারের উদ্দেশ্যে বিদেশে নিয়ে গেছেন।
সর্বশেষ ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর আশপাশের পরিচিতজনদের কাছে মেয়ের খোঁজ পেয়েছেন বলে জানান তিনি। এনডিটিভি জানিয়েছে, ২২ বছরের ওই তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক নির্যাতনের পর দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়। গ্রেফতার সবাই একই গ্রুপের এবং সবাই বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের দুইজন নারীও রয়েছেন।
গণমাধ্যমটিতে জানানো হয়, নির্যাতনের ওই ঘটনাটি ঘটেছে ছয় দিন আগে। বিভৎস কায়দায় নির্যাতনের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
বেঙ্গালুরু সিটি পুলিশের কমিশনার কামাল পান্ট টুইটারে জানান, নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি তরুণীকে পাচারের জন্য ভারতে আনা হয়েছিল। তিনি এখন অন্য একটি রাজ্যে রয়েছেন। তাকে বেঙ্গালুরুতে নেওয়ার জন্য পুলিশের একটি দল গেছে। তাকে বেঙ্গালুরুতে নেওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার জবানবন্দি নেওয়া হবে।
এদিকে পাচার হওয়ার পর নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি তরুণীকে উদ্ধারে ভারতের কেরালা রাজ্যে অভিযান চালাচ্ছে বেঙ্গালুরু পুলিশ। পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তার নেতৃত্বে এই অভিযান চলছে বলে বেঙ্গালুরু পুলিশ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগকে জানিয়েছে।
শুক্রবার রাতে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ওই তরুণীকে উদ্ধরের কোনো খবর জানাতে পারেনি পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে তারা সার্বক্ষণিক বেঙ্গালুরু পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলার সূত্র ধরে নির্যাতনের ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পাচারকারীদের হাত থেকে পালিয়ে দেশে ফিরেছেন এমন এক তরুণীর তথ্য পাওয়া গেছে। ওই তরুণীও টিকটক করতেন। তিনিও চক্রের অন্যতম সদস্য টিকটক বাবুর মাধ্যমে চক্রের ফাঁদে পড়ে ভারতে যান। সেখানে তাকে বিক্রি করার চেষ্টা করেছিল চক্রের সদস্যরা। তবে তিনি কৌশলে পালিয়ে দেশে ফিরে আসেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে পুলিশ। ওই তরুণীর কাছ থেকে এই চক্রের বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।