ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের স্বার্থের পেছনে না ছুটে আদর্শের রাজনীতি করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থের পেছনে না ছুটে মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর খামার বাড়ির বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রলীগের মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা একটা শিক্ষা দিয়ে গেছে মানুষকে, ধন-সম্পদ কোনো কিছু কাজে লাগে না। অর্থসম্পদ কোনো কিছু কাজে লাগে না। মানুষকে যেমন হঠাৎ করে মরতে হয় আবার সম্পদ বানালেও যে সেগুলো কোনো কাজেই লাগে না, করোনা কিন্তু সেই শিক্ষা দিয়ে গেছে সবাইকে। কাজেই অহেতুক অর্থের পেছনে না ছুটে মানুষের জন্য কাজ করা একজন রাজনৈতিক নেতার কাজ। সেটাই তোমাদের মাথায় রাখতে হবে।’
জাতির পিতার উক্তি ‘মহান অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার’ সে কথা ছাত্রলীগকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজেই আমাদের ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে মনে রাখতে হবে, তারা কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়। সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়। নিজেদের এসবের ঊর্ধ্বে রেখে দেশ যেন শান্তির পথে, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।’
ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। কাজেই আমাদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এগুতে হবে। কম্পিউটার শিক্ষা, প্রযুক্তি শিক্ষা, ইন্টারনেট ব্যবহার, সকলের হাতে হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে দেওয়া-আমরা সবই করে দিয়েছি। ২০০৮ সাল থেকে একটানা ক্ষমতায় থাকার ফলে আজকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রযুক্তির ব্যবহার পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কাজেই মানুষকে আর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। মানুষের দৃষ্টি খুলে গেছে কেননা হাতের মুঠোয় পৃথিবী এসে গেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশ, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসবে, প্রযুক্তির এই যুগে মানুষের কর্মদক্ষতারও পরিবর্তন ঘটবে এবং তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এখন থেকে তৈরি হতে হবে। যাতে এই চতুর্থ মিল্প বিপ্লবের যুগে দক্ষ মানবশক্তি গড়ে তোলার যে পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি সেটা কাজে লাগাতে পারি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারি।’
নীতি ও আদর্শ নিয়ে চললে সব বাধা যে অতিক্রম করা যায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের এই একটি ঘোষণা সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির আমূল বদলে দিয়েছে। এই অর্জনকে আমাদের ধরে রাখতে হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের দল গণমানুষের দল, অধিকারহারা মানুষের কথা বলেই এই সংগঠন তৈরি। এই গর্বটা থাকতে হবে। কিন্তু সেটা যেন আবার অহমিকায় পরিণত না হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে, বিনয়ী হতে হবে। আর দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ছাত্রলীগকে বলি, তোমরা নিজেদেরকে গড়ে তুলবা একজন আদর্শবান কর্মী হিসেবে। খেয়াল রাখবা কোনো লোভের বশবর্তী হয়ে পা পিছলে পড়ে যেও না। নিজেদের শক্ত করে সততার পথে এগিয়ে যাবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করবে এবং জাতির পিতা আদর্শ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কাজ করবে। আর সেভাবেই নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।’
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সভাপতি আল রাহিয়ান খান জয় সভাপতিত্ব করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান এমপি বক্তৃতা করেন। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপরই জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের সব শহীদসহ মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মাতৃভূমি পাঠাগার’ উদ্বোধন করেন।