আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, ‘দাবি আদায়ে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতি বা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন আজ সারা পৃথিবীতে সমাদৃত। তিনি ছিলেন মানবদরদি ও নির্মোহ মানুষ। যিনি সত্যাগ্রহ দর্শন, মানবকল্যাণ ও দারিদ্র্য দূর করতে মানুষের মাঝে নেতৃত্ব সৃষ্টি করেছেন।’
শনিবার (২ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার জয়াগ ইউনিয়নের গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ক্যাম্পাসে মহাত্মা গান্ধীর ১৫২তম জন্মবার্ষিকী, আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস ও নবরূপায়িত গান্ধী মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের উদ্বোধনের পর এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতির কারণে ইংরেজদের অসহ্য নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। আজ সেই অহিংস নীতি অনুযায়ী ইংরেজদের সংগ্রাম ও আন্দোলন সফল হচ্ছে। মহাত্মা গান্ধী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নোয়াখালী এসেছিলেন। গান্ধীজি জীবন বাজী রেখে নোয়াখালীর দাঙ্গা থামিয়েছেন। তার আগমনের ফলে নোয়াখালীতে শান্তি ফিরে এসেছে।’
স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বর্তমান সরকার অহিংস নীতি অনুযায়ী কাজ করছে উল্লেখ করে আনিসুল হক বলেন, ‘জাতির পিতা যে স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করতে চেয়েছেন সেখানে অহিংস নীতি ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও অহিংস নীতির মানুষ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই অহিংস নীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন।’
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু যতগুলো আন্দোলন করেছেন সবই আইনের মধ্যেই করেছেন। অহিংস আন্দোলন শুরু করেছিলেন গান্ধী আর শেষ করেছেন বঙ্গবন্ধু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহিংসতা দূর করতে জাতিসংঘে ‘কালচার অব পিস’ প্রস্তাবনা করেন। পৃথিবীর ১৯৩টি দেশ যা সমর্থন করেছে। এটিও অহিংস পথ দূর করতে সহায়ক।’’
অনুষ্ঠানের শুরুতে মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এরপর, ফিতা কেটে নবরূপায়িত গান্ধী মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের উদ্বোধন করেন আইনমন্ত্রী।
গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সভাপতি বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রধান অতিথি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বিশেষ অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশ নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার শ্রী বিক্রম দোরাইস্বামী, আসাদুজ্জামান নূর ও অ্যারোমা দত্ত ও জাতিসংঘের অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিনিধি তৌমু পউতি আইনেন।
উল্লেখ্য, ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের শেষ দিকে ১৯৪৬ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার সর্বত্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। মহাত্মা গান্ধী ‘শান্তি মিশনে’ দ্রুত নোয়াখালী ছুটে যান। ১৯৪৬ সালের ৭ নভেম্বর তিনি চৌমুহনী রেলস্টেশনে অবতরণ করেন। আইনসভার স্থানীয় সদস্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় গান্ধী শান্তি ও ভালবাসার জন্য আহ্বান জানান। দেশ ও বিদেশ থেকে যোগদানকারী স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে তিনি তার শান্তি মিশন চালিয়ে যান। তিনি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ছুটে যান এবং জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক ঐক্য প্রতিষ্ঠায় নিরলস কাজ করতে থাকেন। অহিংসা এবং নৈতিকতা, সত্য ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের নীতি তার মিশনকে সফল করে তোলে। ১৯৪৭ সালের ২৯ জানুয়ারি গান্ধী জয়াগ পৌঁছেন। স্থানীয় জমিদার এবং নোয়াখালী জেলার প্রথম ব্যারিস্টার হেমন্তকুমার ঘোষ তার স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি মহাত্মাকে দান করেন। গান্ধী ‘অম্বিকা-কালীগঙ্গা দাতব্য ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সে মর্মে এক দলিল নিবন্ধিত করেন।