বগুড়ার শিবগঞ্জে জিন হাজিরের মাধ্যমে নিঃসন্তান নারীদের চিকিৎসার অসিলায় তাদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে তান্ত্রিক রোমান ওরফে রুম্মান হাসান (২৪) নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পুলিশ শনিবার রাতে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন পেয়ে উপজেলার বিহার ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামের আস্তানা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে মানুষের মাথার খুলি, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, অসংখ্য তাবিজ, জাদুর ঝুলি ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে শিবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, জাতীয় পরিষেবার নম্বরে ফোন পেয়ে কথিত হাফেজ ও তান্ত্রিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেউ মামলা করলে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হবে। অন্যথায় ৫৪ ধারায় চালান দেওয়া হবে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রোমান ওরফে রুম্মান হাসান বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার ফকিরপাড়া গ্রামের আজাহার আলী ফকিরের ছেলে। সে মানিকগঞ্জের সিংগাইরে কোরআনে হাফেজ পড়তে গিয়ে অনৈতিক কাজে জড়িত হওয়ায় তাকে সেখান থেকে বিতাড়িত করা হয়। এরপর থেকে সে নিজেকে হাফেজ ও তান্ত্রিক পরিচয়ে এলাকায় বন্ধ্যা নারীদের জিনের মাধ্যমে চিকিৎসা, অবাধ্য সন্তানকে বাধ্য, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সুসম্পর্ক, প্রেম অটুট ও প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করাসহ নানা ধরনের চিকিৎসা শুরু করে।
রুম্মান বাড়িতেই আস্তানা খুলে বসে। তার বাবা আজাহার আলী ফকিরও দীর্ঘদিন এলাকায় তাবিজ-কবজের মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। রুম্মান জিন হাজিরের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়- এমন প্রচারণা শুনে বিভিন্ন এলাকার জনগণ বিশেষ করে নিঃসন্তান নারী ও প্রবাসীদের স্ত্রীরা তার আস্তানায় ভিড় করতে থাকেন।
এদিকে অভিযোগ ওঠে রুম্মান হাসান জিন হাজিরের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়ার নামে নারীদের যৌন হয়রানি ও ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেয়। যৌন উত্তেজক ওষুধ খাইয়ে নারীদের সঙ্গে অনৈতিক কাজ করে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা মান-সম্মানের ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখেন।
চককানু গ্রামের স্বাধীন আলী নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে গ্রামের এক নারীর অবৈধ সম্পর্ক আছে- এমন প্রচারণা চালিয়েও টাকা আদায়ের চেষ্টা করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের চককানু গ্রামের এক ব্যক্তি ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন দিয়ে রুম্মানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই পুলিশ বাড়ির আস্তানায় অভিযান চালিয়ে রুম্মানকে গ্রেফতার করে। আস্তানায় মানুষের মাথার খুলি, যৌন উত্তেজক ওষুধ, জাদুর ঝুলি, বিভিন্ন সরঞ্জাম ও বিপুলসংখ্যক তাবিজ উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারের সময় রুম্মান হাসান নিজেকে নিরপরাধ ও সফল চিকিৎসক দাবি করেন।
শিবগঞ্জ থানার ওসি রোববার দুপুরে জানান, ওই যুবক একজন প্রতারক। সে নিজেকে হাফেজ ও তান্ত্রিক দাবি করলেও তা সঠিক নয়। গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, জিন হাজিরের মাধ্যমে নিঃসন্তানকে সন্তান দেওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছে। তবে দুপুর পর্যন্ত কেউ মামলা দেয়নি।
ভুক্তভোগীদের কেউ মামলা দিলে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হবে। আর না দিলে ৫৪ ধারায় আদালতে চালান দেওয়া হবে।