বাসুদেব বিশ্বাস ,বান্দরবান : নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই সমাপ্ত হয়েছে বান্দরবান-কেরানীহাট জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ। ২৬৬.৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্বাবধানে প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন করেছে সেনাবাহিনীর ২০ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। আর এর মাধ্যমে জাতীয় মহাসড়কে যুক্ত হলো পর্যটন নগরী খ্যাত পার্বত্য জেলা বান্দরবান।
বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন নগরী খ্যাত পার্বত্য জেলা বান্দরবানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক। পর্যটন শহর হওয়ায় প্রতিদিন হাজার হাজার দেশী বিদেশী পর্যটকসহ স্থানীয়রা যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করে সড়কটি, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে জেলার একমাত্র সড়কটি আঁকা বাঁকা ঢালু ও সরু হওয়ায় প্রায়ই ঘটত নানা ধরণের দুর্ঘটনা। শুধু তাই নয় সড়কের বিভিন্নস্থানে নিচু হওয়ার কারনে বর্ষা মৌসুমে কয়েকদিন বৃষ্টি হলে তলিয়ে যেত কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের বিভিন্ন অংশ আর এর ফলে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ। এতে চরম দূর্ভোগে পড়ত পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
এদিকে পর্যটন জেলা বান্দরবানের এমন অবস্থার প্রেক্ষাপটে সড়কটির যথাযথ মান,প্রশস্তকরন ও উন্নতীকরণের করে জাতীয় মহাসড়কে রুপান্তর করতে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনে ২০ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। প্রকল্পের আওতায় দীর্ঘ ২৩কিলোমিটার কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করায় এখন লাঘব হবে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি, উন্নত হবে স্থানীয়দের জীবনমান, হ্রাস পাবে সড়ক দূর্ঘটনা এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের ।
বান্দরবানের বাসস্টেশান এলাকার বাসিন্দা মো:আরমান বলেন, বান্দরবান-কেরানীহাট জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে আর নতুন এই সড়ক খুব সুন্দর ও প্রশস্ত হয়েছে যা দেখে স্থানীয় ও পর্যটকরা খুবই বিমোহিত। তিনি আরো বলেন, আগে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের অনেকস্থানে ভাঙ্গা ছিল ,অনেকস্থানে উচু নিচু আকাঁবাকা ছিল কিন্তুু এখন জাতীয় মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় বান্দরবানের সড়কটি অনেক বড় হয়েছে এবং প্রশস্ত হয়েছে বেশ কিছুস্থানে।
বান্দরবান চট্টগ্রাম সড়কের বাস চালক মো.জসীম বলেন, বান্দরবান সড়কে এখন বাস চালাতে আগের চেয়ে অধিক সহজ ও ভালো। আগের চেয়ে সড়কের মান ভালো হয়েছে এবং বেশিরভাগ স্থানে সড়কের পাশে সাইনবোর্ড রয়েছে এবং রোড ডিভাইডার রয়েছে আর এতে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে যাবে।
সুত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩অক্টোবর কেরানীহাট-বান্দরবান জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান,প্রশস্ততা ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্বাবধানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উপর অর্পিত হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোর অব ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনে ২০ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই (১৫ ডিসেম্বর ২০২২) সফলভাবে সম্পন্ন করে।
প্রকল্পের আওতায় ২১টি ব্রীজ, ১৫টি কালভার্ট, ২১কিলোমিটার ড্রেনেজ নিস্কাষন অবকাঠামো তৈরিসহ সড়ক প্রশস্তকরনসহ কাজের গুনগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই প্রকল্পটির কাজ শেষ করা হয়েছে বলে জানান প্রকল্পের কর্মকর্তারা আর এই সড়কটি মহাসড়কে উন্নীত হওয়ায় ফলে বান্দরবানের অর্থনৌতিক অবস্থার আরো উন্নয়ন হবে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের। কেরানীহাট-বান্দরবান জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান,প্রশস্ততা ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ প্রকল্প এর প্রকল্প কর্মকর্তা (২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন) মেজর মো: শাহ সাদমান রহমান বলেন, ২৬৬.৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্বাবধানে প্রকল্পের কাজটি সম্পন্ন করেছে সেনাবাহিনীর ২০ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। এই সড়কটির গড় প্রশস্থতা পূর্বে মাত্র ৫.৫৮ মিটার ছিল, এছাড়া বিভিন্ন যানবাহন এবং পণ্যবাহী বাহনের চাপ অনুযায়ী সড়কটির প্রশস্ততা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। প্রশস্থতা কম থাকায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে উভয়মুখী যানবাহন চলাচল করতে হতো ,ফলে সড়কটিতে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটতো । বিদ্যমান সড়কটি নিচু থাকায় বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে সড়কটির অধিকাংশ তলিয়ে যেত,ফলে বান্দরবানের সাথে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো। ফলশ্রুতিতে সড়কটির বিদ্যমান ব্রীজ ও কালভার্টসমুহ পুন:নির্মাণসহ সড়কটির প্রশতস্থা বৃদ্ধি এবং যথাযথ মান উচ্চতায় উন্নীকরণ করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়ে । তিনি আরো জানান,সড়ক প্রশস্ত করনসহ কাজের গুনগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই প্রকল্পটির কাজ শেষ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্বাবধানে সেনাবাহিনীর ২০ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন।
এদিকে সড়ক বিভাগ বান্দরবান এর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ্উদ্দীন চৌধুরী জানান, ২০১৮ সালের ২৩অক্টোবর কেরানীহাট-বান্দরবান জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান,প্রশস্ততা ও উচ্চতায় উন্নীতকরণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদিত হয় আর ২০১৯ সালে শুরু হয় বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কটি জাতীয় মহাসড়ক উন্নীতকরনের কাজ । তিনি আরো জানান, সেনাবাহিনীর ২০ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন এর অক্লান্ত পরিশ্রমে সড়কটির কাজ শেষ হয়েছে এবং শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সড়কটির উদ্বোধন করবেন। সড়কটি জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত হওয়ায় ফলে এখন নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের আরো প্রসার ঘটবে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ্উদ্দীন চৌধুরী ।