বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা ম্যানগ্রেভ সুন্দরবন চব্বিশ ঘণ্টায় জোয়ারের পানিতে এক থেকে দেড় ফুট প্লাবিত হলেও এখন জলবায়ু পরিবর্তনসহ ঘনঘনপ্রাকৃতিক দুর্যোগে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যাচ্ছে। সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে গত তিন দিনে ৩ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে গোটা সুন্দরবন। সুন্দরবনের সব থেকে উচু এলাকা হিসেবে চিহ্নিত চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল ট্যুরিজম ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ও এছাড়াও সুন্দরবন ঘেষা জেলার শরোনখোলা, মোরেলগঞ্জ ও মংলা উপজেলার জোয়ারের পানিতে ১শতাধিক গ্রাম ৩ থেকে ৪ ফুট পানির নিচেতলিয়েগেছে। রবিবার দুপুরের জোয়ারে ৩ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে।এই অবস্থায় গোটা সুন্দরবনে বাঘ, হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। পানির তোড়ে মারা পড়ছে অনেক বন্যপ্রাণী। গত তিন মাসে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের লোকালয়ে ঢুকে পড়ে বাঘ, হরিণ ও অজগরসহ ৫০টি অধিক বন্যপ্রাণী। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদীতে মৃত অবস্থায় ভেসে আসা তিনটি হরিণ উদ্ধার করে স্থনীয়রা।
তবে, সুন্দরবন বিভাগ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনসহ ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গোটা সুন্দরবনে ৮৫টি পুকুরের উচু পাড়সহ বন বিভাগের অফিস ও টহল ফাঁড়ির উচু এলাকায় বন্যপ্রাণীরা আশ্রয় নিচ্ছে। বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পেরআওতায় ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ (বিশ্ব ঐতিহ্য) সাইডে শুষ্ক মৌসুমে ১২টি উচু মাটির টিলা বা কিল্লা নির্মাণ কাজ শেষ হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঘ, হরিণ ও অজগরসহ বন্যপ্রাণীদের আরো নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে।বর্তমানে সুন্দরবনে পর্যটনসহ সব ধরনের লোকজনের প্রবেশাধীকারে নিষেধাঞ্জা চলছে। সে কারণে গত ৩ দিনে সুন্দরবন ৩ থেকে ৫ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হলেও পানির তোড়ে অনেক বন্যপ্রাণী ভেঁসে গেছে বা মারা পড়ছে এটা সত্য। তবে, সুন্দরবনে লোকজন না থাকায় ভেসে যাওয়া বা কতো বন্যপ্রাণী মারা পড়ছে সেবিষয়টি জানা যাচ্ছেনা।বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী
প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজাদ কবির জানান, লঘুচাপের প্রভাব ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক উচ্চতার জোয়ারের সুন্দরবনের করমজল ট্যুরিজম ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র গত দুই দিনে (বৃহস্পতিবার থেকে রবিবার) ২ থেকে আড়াই ফুট উচ্চতার জ্বলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে যায়। তবে রবিবার (১৪ আগষ্ট) দুপুরের জোয়ারে তিন ফুটের অধিক পানি বেড়ে গোটা এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে করমজলের রাস্তঘাটসহ পানি থৈ-থৈ করছে। তবে, এখনো করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণী হরিণ, কুমির ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকা নিরাপদ রয়েছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আতু নাসের মোহম্মদ মহসিন হোসেন জানান, জলবায়ু পরিবর্তনসহ ঘন ঘন প্রাকৃতিকদুর্যোগে সুন্দরবনে পানির উচ্চতা বাড়ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় গোটা সুন্দরবনে ৮৫টি পুকুরের উচু পাহাড়সহ বন বিভাগের অফিস ও টহল ফাঁড়ির উচু এলাকায় বন্যপ্রাণীরা আশ্রয় নিচ্ছে। বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ (বিশ্ব ঐতিহ্য) সাইডে শুষ্ক মৌসুমে ১২টি উচু মাটির টিলা বা কিল্লা নির্মাণ কাজ শেষে হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঘ, হরিণ ও অজগরসহ বন্যপ্রাণীদের আরো নিরাপদ রাখা সম্ভব হবে।