যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি নির্যাতনে নিহত কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। এছাড়াও তার শরীরে আফিম জাতীয় মাদকের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে। তবে শ্বাসরোধের কারণেই ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার তার চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন এবং ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে হেনেপিন কাউন্টি মেডিকেল এক্সামিনারস অফিস থেকে জানানো হয়েছে, গত ৩ এপ্রিল করোনাভাইরাস ধরা পড়েছিল জর্জ ফ্লয়েডের শরীরে। তবে এতদিন পরও তার কোনও ধরনের উপসর্গ ছিল না। মৃত্যুর সময়ও উপসর্গবিহীন ছিলেন তিনি। তবে ফ্লয়েডের মৃত্যুতে করোনার প্রভাব ছিল এমন কোনও প্রমাণ পাননি পরীক্ষকরা। বরং পরিবারের দাবিতে স্বাধীন ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের মতো এবারও বলা হয়েছে, ফ্লয়েডের মৃত্যুর পদ্ধতি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিলে যায়।
তবে চূড়ান্ত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি নতুন তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জর্জ ফ্লয়েডের হৃদরোগ ছিল, তার শরীরে ফেনটানাইল ও মেথামফেটামাইনের উপস্থিতি দেখা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্লয়েডের ফুসফুস সুস্থ থাকলেও হৃদপিণ্ডের ধমণী সরু হয়ে এসেছিল। এক নোটে বলা হয়েছে, আফিমজাতীয় ব্যথানাশক ফেনটানাইলের প্রভাবে শ্বাসতন্ত্রে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এর আগে, গত সপ্তাহে প্রাথমিক ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, জর্জ ফ্লয়েডকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে গত সোমবার স্বাধীন ময়নাতদন্তকারী ও ফ্লয়েড পরিবারের দুই আইনজীবী ওই দাবি উড়িয়ে দেন এবং প্রেস রিলিজে জানান, এটি পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। তবে অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও জর্জের মৃত্যুতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। তাদের দাবি, এক পুলিশ কর্মকর্তা ফ্লয়েডের ঘাড়ে পা চেপে রেখেছিলেন। এসময় আরও দুই পুলিশ তার পিঠে ভর দিয়ে রাখেন। এর কারণেই শ্বাসরোধ হয়ে ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। তবে স্বাধীন ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের কোথাও মাদক গ্রহণের কথা বলা হয়নি।
জানা যায়, মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে একটি রেস্তোরাঁয় নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করতেন ৪৬ বছর বয়সী জর্জ ফ্লয়েড। গত ২৫ মে সন্ধ্যায় প্রতারণার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এসময় এক পুলিশ কর্মকর্তা প্রকাশ্যে রাস্তায় মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে গলা চেপে ধরেন জর্জের। এভাবে অন্তত আট মিনিট তাকে মাটিতে চেপে ধরে রাখা হয়।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর তোলা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, জর্জ ফ্লয়েড নিঃশ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তাকে বলছেন, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’ এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয় মুহূর্তেই। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার মানুষ। প্রথম দিকে বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকলেও ধীরে ধীরে তা সহিংসতায় রূপ নেয়।