জনগণকে প্রতিপক্ষ বানালে এর পরিণতি শুভ হবে না বলে প্রশাসনের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা প্রশাসনকে খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জনগণকে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। জনগণ থেকেই আপনারা এসেছেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন চলে, সংসার চলে। সুতরাং জনগণকে সন্মান করুন। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না।
তিনি বলেন, কথায় কথায় গুলি করবেন না বেআইনি নির্দেশ নিয়ে। ওই যেমন আজকে র্যাবের ওপরে স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) এসেছে। ঠিক তেমনি যে কোনো বাহিনীর ওপরেও স্যাংশন আসতে পারে, যদি আইন না মেনে মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে থাকে।
রোববার, সেপ্টেম্বর ১১,২০২২, বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই প্রশাসনের প্রতি এই হুশিয়ারি দেন।
উত্তরায় ‘গুম’ হওয়া ছাত্রদলের সাজেদুল ইসলাম মুন্না ও ঝন্টু হোসেনের পরিবারের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে দেশে মানবাধিকার নেই, গুলি করে হত্যা করা হয়, গুম করে নিয়ে যায় সাদা পোশাকধারীরা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। সারাদেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল-ডাল-লবণ-তেলের মূল্য কমানোর আন্দোলন করছি, পেট্রল-ডিজেল-কেরোসিনের মূল্য কমানোর জন্য আন্দোলন করছি, সারের দাম কমানোর জন্য আন্দোলন করছি। আমাদের ভাই ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম ও নারায়ণগঞ্জের শওকত প্রধানকে হত্যা করা হয়েছে, তার বিচারের জন্য আমরা আন্দোলন করছি। দেশের মানুষ গর্জে উঠেছে। নুরে আলমরা প্রাণ দিতে দ্বিধা করেননি। আজকে আমি ঘোষণা করতে চাই, আমরা কেউ প্রাণ দিতে দ্বিধা করবে না।
‘আমাদের দাবি একটাই, এই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেতে চাই, ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চাই, আমরা আমাদের বাঁচার অধিকার ফিরে চাই, আমরা শান্তিতে বাস করতে চাই। আমরা একটা মুক্ত সমাজে বাস করতে চাই, একটা সমৃদ্ধ দেশে বাস করতে চাই। আমরা এই চোর-ডাকাত আওয়ামী লীগের হাত থেকে মুক্তি চাই,’ বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই আপনাদের সামনে যে এলিভেটেড রাস্তার নির্মাণকাজ ১০ বছর ধরে, আপনারা চিন্তা করতে পারেন। ১০ বছর ধরে এই রাস্তায় কাজ চলছে, ক্রেন মানুষ মেরে ফেলছে। তারপরও কাজ শেষ হচ্ছে না।
‘কারণ কী? কারণ একটাই। এই রাস্তা নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হচ্ছে ২১৩ কোটি টাকা। পৃথিবীর কোনো দেশে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে এত খরচ হয় না। এভাবে তারা সারাদেশে মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি চলছে। বাংলাদেশের মানুষকে তারা না খাইয়ে রাখছে, শতকরা ৪২ ভাগ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে,’ যোগ করেন তিনি।
‘নতুন ইসি ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দাবি একটাই, এই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে খুব পরিষ্কার কথা বলতে চাই, এই ব্যর্থ সরকার দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাদের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বাতিল করতে হবে এবং সরকারকে পদত্যাগ করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’
এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা একটা গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন চাই। এদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, জনগণের পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা হবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সরকার একে একে সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। পার্লামেন্ট একটা আছে, এই পার্লামেন্ট এখন একটা রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট। এটাকে আমরা বলি গৃহপালিত পার্লামেন্ট। এখানে কোনো বিরোধী দল কাজ করে না, এখানে দেশের মানুষের সমস্যা নিয়ে আলাপ হয় না। জিনিসপত্রের দাম বাড়ে, তেলের দাম বাড়ে, করোনার চিকিৎসা, এসব নিয়ে এই পার্লামেন্টে আলোচনা হয় না।’
‘আলোচনা হয় কী? তোষামোদি, একজনের তোষামোদি, এক ব্যক্তির তোষামোদি হয়। আজকে বিচার বিভাগকে তারা (সরকার) দলীয়করণ করে ফেলেছে। এই বিচার বিভাগের কাছে মানুষ ন্যায়বিচার পায় না,’ বলেন তিনি।
‘খালেদা জিয়াকে ওরা ভয় পায়’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে, তার প্রতি অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে। তাকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে, এটা কোনো মামলাই নয়। ২ কোটি টাকার মামলা। সেই টাকা এখন ব্যাংকে বেড়ে ৮ কোটি টাকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে সব ডাক্তাররা বলেছেন। কিন্তু এরা তাকে বাইরে চিকিৎসা করতে দিতে চায় না। কারণ দেশনেত্রীকে তারা ভয় পায়। যদি উনি আবার বেরিয়ে আসেন, আবার রাজপথে নামেন তাহলে হেমিলিনের বংশীবাদকের মতো লাখো মানুষ নামবে তখন তাদের তখতে তাউস উড়ে চলে যাবে।’
‘আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রেখেছে। তাকে দেশে আসতে দিচ্ছে না,’ যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
উত্তরার পলওয়েল কনভেনশন সড়কে বিএনপি মহানগর উত্তর পূর্ব জোনের উদ্যোগে জ্বালানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং পুলিশের গুলিতে ভোলায় নুরে আলম, আব্দুর রহিম ও নারায়ণগঞ্জে শাওন প্রধান হত্যার প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়।
মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, তাবিথ আউয়াল, এস এম জাহাঙ্গীর, কফিল উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।