করোনা মহামারির কারণে এখনও সংকটে এভিয়েশন খাত। সীমিত আকারে ফ্লাইট শুরু হলেও পরিচালন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে দেশি এয়ারলাইনগুলো। রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ব্যয় কমাতে কাটছে কর্মীদের বেতন। এই সংকটের মুখে তাই বিকল্প আয়ের খোঁজে বিমান।
বিমান সূত্র জানায়, ১৯টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার সক্ষমতা থাকলে বিভিন্ন কারণে সব রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না বিমান। বরং ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় যাত্রীদের টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। দেশে ও বিদেশে বিমানের অফিস পরিচালনা ব্যয় শত কোটি টাকার ওপরে। বিমানের বহরের রয়েছে ১৯টি উড়োজাহাজ, যেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করতে মাসে প্রায় ২৬০ কোটি টাকা খরচ হয়। এমন পরিস্থিতিতে করোনা মহামারিতে ব্যয় কমাতে কর্মীদের বেতন কাটা শুরু করে বিমান, যা এখনও চলমান রয়েছে। তবে তাতেও সুবিধা করতে না পেরে সরকারের কাছ থেকে এক হাজার কোটি টাকা লোনও নিয়েছে সংস্থাটি।
সূত্র জানায়, বিমানের রয়েছে নিজস্ব ছাপাখানা, গাড়ি মেরামতের ওয়ার্কশপ এবং মাছ, মুরগি, গরু, সবজি চাষের খামার। বিমানের নিজস্ব প্রয়োজনে মেটানো হয় এসব জায়গা থেকে। তবে এ খাতগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে আয়ের উদ্যোগ নিয়েছে বিমান। নতুন রুটও চালু করতে যাচ্ছে সংস্থাটি। মার্চ মাসে টরন্টো, টোকিও ও চেন্নাই রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট শুরু হবে। ঢাকা-নিউ ইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইটের ব্যাপারেও উদ্যোগ চলমান রয়েছে।
রাজধানীর ফার্মগেটে বিমানের নিজস্ব জায়গায় মুদ্রণ ও প্রকাশনা বিভাগ রয়েছে। একজন মহা ব্যবস্থাপকের অধীনে এই ছাপাখানায় এত দিন বিমানের বোর্ডিং কার্ড, ম্যানুয়াল, মানি রিসিট, ফরমসহ প্রয়োজনীয় মুদ্রণের কাজ করা হতো। তবে ছাপা টিকিটের ব্যবহার না হওয়া ও অনলাইনের ব্যবহার বাড়তে থাকায় ছাপার পরিমাণ কমতে থাকে। সম্প্রতি আয় বাড়াতে ছাপা খানায় আধুনিকায়ন করা হয়েছে। নতুন করে জনবল প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। বর্তমানে এ ছাপাখানায় রয়েছে জার্মানির হাইডেলবার্গ কোম্পানির প্রিন্টিং মেশিন, পোলার পেপার কাটিং মেশিন, প্লেট মেকিং মেশিন, ডাই কাটিং মেশিন, গ্লু/ম্যাট/স্পট লেমিনেশন মেশিন, প্যানা-পিভিসি প্রিন্টিং মেশিন। ইতোমধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোর বিভিন্ন প্রকাশনা বিমান প্রেসে মুদ্রণ করা শুরু হয়েছে।
সাভারের গণকবাড়ী এলাকায় ৭৬ দশমিক ১২ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে বিমান পোলট্রি কমপ্লেক্স। সরকারের কাছ থেকে এডিপি লোন নিয়ে বিমান এই কমপ্লেক্স স্থাপন করে। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই কমপ্লেক্স। ১৯৮০ সালের ১০ নভেম্বর উৎপাদন শুরু হয় এখানে। সেখানে রয়েছে ব্রয়লার ইউনিট, ফিড মিল ইউনিট, ডেইরি ইউনিট, ফিশারিজ ইউনিট, এগ্রিকালচার ইউনিট। বিমানের ফ্লাইটে যাত্রীদের খাবারের জন্য এই ফার্ম থেকে উৎপাদিত মাছ, মাংস, সবজি সরবরাহ করা হয়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য সীমিত আকারে এতদিন বিমান পোলট্রি কমপ্লেক্সের বিক্রয় কেন্দ্র ও হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা বিমানের এমটি গেট সংলগ্ন বিমান পোলট্রি কমপ্লেক্সের বিক্রয় কেন্দ্র বিক্রি করা হতো। সেখানে পাওয়া যায়- ড্রেসড্ মুরগি, মুরগির গিলা-কলিজা, মুরগির লেফ্টওভার, ডিম, গরুর দুধ, গরুর মাংস, তেলাপিয়া মাছ, নাইলোটিকা মাছ, পাঙ্গাস মাছ, মৌসুমি শাক-সবজি ও ফলমূল। এসব পণ্য এখন ধানমন্ডিসহ বিমানের অন্যান্য সেলস সেন্টারে ব্যাপক হারে বিক্রির জন্য প্রর্দশন করা হবে।
হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় রয়েছে বিমানের নিজস্ব মটর ট্রান্সপোর্ট ইউনিট। সেখানে বিমানের কর্মী, যাত্রী, পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত যানবাহন মেরামতের কাজ করা হয়। বিমানের নিজস্ব জনবল দিয়ে পরিচালিত এ ইউনিটটিও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিমানের নিজস্ব পরিবহন ছাড়াও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গাড়ি মেরামত করে আয় করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে বিমান।
এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, পুরো পৃথিবীতেই করোনা মহামারির কারণে এভিয়েশন ও পর্যটন খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও সংকটের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বর্তমানে বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে ফ্লাইট চলাচল করলেও মুনাফা অর্জন সহজ নয়। রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইন্স বিমানও এ সংকটের মুখোমুখি।
লোকসান কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া প্রসঙ্গে মাহবুব আলী বলেন, বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিমানের প্রেস, মোটর ট্রান্সপোর্ট, পোল্টি ফার্মকেও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিমানের অপারেশনাল ব্যয় কমিয়ে আয় বৃদ্ধির চেষ্টা বিমানকে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন