ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ফেল করায় সলিং রাস্তার ইট তুলে নেওয়া হয়েছে! এ ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের শালীহর গ্রামের মরহুম আফতার উদ্দিন মেম্বারের বাড়ির সামনের সড়কে।
বৃহস্পতিবারও সেই সড়কের ইট উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, ৪র্থ ধাপে ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন গত ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন, দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে পরাজিত হন। বিজয়ী হন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. হযরত আলী।
রাস্তাটি আনোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে অর্থাৎ প্রায় ৮ মাস পূর্বে নির্মাণ করা হয়। নির্বাচনে ফেল করায় তিনি সলিং রাস্তার ইট খুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
রাস্তার ইট খুলে নেওয়ার নির্দেশ প্রদানের বিষয়টি এই প্রতিনিধির সঙ্গে স্বীকার করেন সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি জানান, আমি চেয়ারম্যান থাকাকালে এলজিএসপি প্রকল্পের মাধ্যমে এ কাজ করতে চেয়েছিলাম। তফসিল দেওয়ায় সেই প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। এরপর নির্বাচনে ফেল করেছি। এ রাস্তার অনুমোদন করাতে পারি নাই। ১৭ হাজার ইট প্রতিবেশী আব্দুস সালামের কাছ থেকে এনে ছিলাম। তাকে বলেছি, খুলে নিয়ে যাও!
শালীহর গ্রামের জুবেদ আলীর স্ত্রী নুরজাহান জানান, আমি রাস্তার ইট তুলে দিতে ৫ হাজার টাকায় চুক্তি করেছি। চেয়ারম্যান সাব নিজে এসে বলার পর ইট তোলা শুরু করেছি।
শালীহর গ্রামের রজব আলীর পুত্র আব্দুল সালাম জানান, তিনি চেয়ারম্যানকে ইট দিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান এখন টাকাও দিতে পারছেন না, ইটও দিচ্ছেন না। তিনি বলেছেন তাই ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ফেল করার পর রাস্তার ইট খুলে ফেলার ঘটনা আমার জীবনেও শুনি নাই। এটা দুঃখজনক ঘটনা।
শালীহর গ্রামের স্বপন মিয়া বলেন, আমাদের কাঁচা রাস্তাই ভালো ছিল। এখন তো এ সড়ক দিয়ে হাঁটাই যাবে না।
আরেক প্রতিবেশী রিপন মিয়া বলেন, ইট তুলে ফেলায় এখন গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভালো রাস্তা খুঁড়ে নষ্ট করা হয়েছে। বাড়ি থেকে এখন গাড়ি নিয়ে বের হওয়াই যাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ বলেন, রাস্তার ইট খুলে নেওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক! রাস্তাটি সংরক্ষণের জন্য বর্তমান চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে যারা ইট খুলে নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২নং গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. হযরত আলী বলেন, মানুষ নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করেছেন। এ কারণে রাস্তার ইট তুলে নেওয়া হচ্ছে, শুনে কষ্ট পেয়েছি! ইউএনও সাহেব মামলা করতে বলেছেন। তিনিও চেয়ারম্যান ছিলেন, আমিও হয়েছি, এটা কীভাবে করি! জনগণ বাধা দিয়েছেন, তিনি সেটা মানেন না, এখন আমি কী করতাম।
উৎসঃ দৈনিক যুগান্তর