বিরোধপূর্ণ ভূখণ্ডকে নিজেদের বলে দাবি করে মানচিত্র প্রকাশের পর ভারতের বিরুদ্ধে আবারও চড়াও হয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি। মঙ্গলবার (১৯ মে) রাতে পার্লামেন্টে দেওয়া এক ভাষণে নেপালে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন তিনি। নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন ও ইতালির ভাইরাসের চেয়ে ভারতীয় ভাইরাসকেই বেশি প্রাণঘাতী হতে দেখা যাচ্ছে। কেপি ওলির এই বক্তব্য সামনে এনেছে ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি।
রাস্তা নির্মাণ নিয়ে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক বিরোধে জড়ানোর পর বিতর্কিত সেই ভূখণ্ডকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নেপাল। মঙ্গলবার (১৯ মে) মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নেপাল সরকারের মুখপাত্র ও অর্থমন্ত্রী যুবরাজ খাটিওয়াদা জানিয়েছেন, বিতর্কিত কালাপানি আর লিপুলেখ ভূখণ্ডকে নিজেদের সীমানায় চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে মানচিত্র প্রকাশ করা হবে। আর তা স্কুল-কলেজের শিক্ষাক্রম এবং সরকারি সব কাজে ব্যবহার করা হবে। ওই ঘোষণার পর রাতে পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে নেপালের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি।
সেখানে নেপালের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত থেকে অবৈধ পথে যারা প্রবেশ করছে তারাই দেশে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে আর যথাযথ পরীক্ষা ছাড়াই ভারত থেকে মানুষ আনায় দায়ী কিছু স্থানীয় প্রতিনিধি ও দলীয় নেতা।’ কেপি ওলি বলেন, ‘বিদেশি মানুষের আনাগোনার কারণে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে চীন ও ইতালির ভাইরাসের চেয়ে ভারতীয় ভাইরাসকেই বেশি প্রাণঘাতী হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর এই ভাইরাসেই আরও বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে।’
চীনের তিব্বত অঞ্চল এবং ভারতের উত্তরাখণ্ডের সীমানায় হিমালয় পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত লিপুলেখ পাস। এর দক্ষিণাঞ্চল নিজেদের বলে দাবি করে থাকে নেপাল। কালাপানি নামে পরিচিত ওই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে ভারত। ১৮১৬ সালের এক চুক্তির অধীনে লিপুলেখ পাসের অংশ বিশেষ দাবি করে থাকে নেপাল। হিমালয়ের ১৭ হাজার ফুট উচ্চতার ওই এলাকায় সম্প্রতি ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা নির্মাণের উদ্বোধন কাজ করেন ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। এরপরই ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে তলব করে কূটনৈতিক নোট ধরিয়ে দেয় নেপাল।
মঙ্গলবার রাতের পার্লামেন্ট ভাষণে ভারতের সঙ্গে ওই বিরোধের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলি। তিনি বলেন, কালাপানি-লিম্পিয়াধুরা-লিপুলেখ এলাকার নিয়ন্ত্রণ যেকোনও মূল্যে ফিরিয়ে আনা হবে।
উল্লেখ্য, ভারত ও নেপালের মধ্যে প্রায় এক হাজার আটশ’ কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে। ১৮১৬ সালে স্বাক্ষরিত সুগাউলি চুক্তির আওতায় লিপুলেখ পাসকে নিজেদের বলে দাবি করে নেপাল। ওই চুক্তির মধ্যদিয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসকেরা ভারতের সঙ্গে নেপালের পশ্চিম সীমান্ত চিহ্নিত করে দেয়। এছাড়া কৌশলগতভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ লিম্পিয়াধুরা ও কালাপানি এলাকাকেও দাবি করে নেপাল। যদিও ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের পর থেকেই এই দুটি এলাকায় ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে।