কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামের চিলমারীতে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী জোড়গাছ বাজার হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
ঐতিহ্যবাহী ওই হাটটি এক বছরের জন্য এক কোটি ৭৫লাখ টাকায় ইজারা নেন মৃত আজিজ ব্যাপারীর ছেলে উকিল আমিন। সপ্তাহে দুই দিন রোববার ও বুধবার ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেষে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বসে বিভিন্ন রকমের খাদ্য শস্যসহ বিভিন্ন পণ্যের হাট। হাটে উপজেলার চরাঞ্চলের তিনটি ইউনিয়নসহ পাশ্ববর্তী রৌমারী, রাজিবপুর, উলিপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মানুষ খাদ্যসশ্য, পশুসহ বিভিন্ন প্রকার পণ্য সামগ্রী বেচা-কেনা করতে আসে।
জানা গেছে, উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী জোড়গাছ হাটটি বাংলা ১৪২৯সনের জন্য ইজারা হয় ১কোটি ৭৫লক্ষ টাকায়। যার ইজারা আদায় কার্যক্রম শুরুর পূর্বে জনসাধারনের জ্ঞাতার্থে টোল আদায়ের হারের তালিকা বাজারের বিভিন্ন স্থানে লাগানোর কথা থাকলেও অদ্যাবধি কোথাও কোন দোল আদায় চার্ট লাগানো হয়নি। টোলের হার তালিকা না লাগিয়ে দরিদ্র কৃষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত টোলের ৫/৬গুন বেশী অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এতে ওই হাটে আসা চরাঞ্চলের কৃষক নিজেদের খরচ বাচাতে পাশ্ববর্তী সুন্দরগঞ্জ ও রাজিবপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটে পণ্য বিক্রি করতে যাচ্ছেন।ফলে ঐতিহ্যবাহী হাটটি দিন দিন ক্রেতা-বিক্রেতা শুন্য হয়ে পড়ছে।
সরেজমিনে জোড়গাছ হাটে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের কড়াইবরিশাল গ্রাম থেকে আসা বেগুন চাষি গওছল আজম ১২মন বেগুন নিয়ে বাজারে এসেছিলেন। প্রতি মন বেগুন ৫৫০টাকায় বিক্রি করলেও তার অভিযোগ ওই টাকায় বেগুন বিক্রি করে উৎপাদন খরচই উঠে না তার ওপর প্রতিমন বেগুনের জন্য বাজারের খাজনা দিতে হয় ৫০ টাকা এবং ঘাট খাজনা দিতে হয় ১০টাকা।টোল তালিকার ৪নং ক্রমিক অনুযায়ী তরকারী (পটল, বেগুন, মূলা, লাউ, কুমড়া, কপি ইত্যাদি কৃষিজাত দ্রব্য ও যাবতীয় শাক-সবজি এক মহিষের গাড়ী ভর্তি পণ্যের টোল ২৫টাকা দেয়া আছে)। তিনি আরও জানান, পাশ্ববর্তী কামারজানি বাজার ও রাজিবপুর বাজারে হাটের খাজনা দিতে হয় মনপ্রতি ১০টাকা। অধিক খাজনা নেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধের দাবী জানান তিনি।একই কথা জানালেন পাট ব্যাসায়ী সুরুজ্জামান মিয়া।পাট খড়ি বিক্রয় করতে আসা সিকারপুর এলাকার কৃষক আব্দুস সালাম জানান,তিনি ১০০টি পাট খড়ির আটি এনেছিলেন এবং তা ৭০০টাকায় বিক্রি করেছেন। এজন্য তাকে খাজনা গুনতে হয়েছে ৭০টাকা। পাট খড়ি, খড়ের আটি,ধনচে এবং খড়ি বিক্রয়ের বিক্রয় মূলের উপর ১০% হারে খাজনা প্রদান বাধ্যতামূলক বলে জানান তিনি। খোদ্দ বাশপাতার এলাকার কৃষক আবু সামা জানান ৬ কেজি বাদাম বিক্রি করতে তাকে খাজনা গুনতে হয়েছে ৮০টাকা। অষ্টমীর চর ইউনিয়নের গয়নার পটল এলাকার কৃষক সোহরাব আলীকে প্রতিমন পেয়াজ বিক্রি করতে খাজনা গুনতে হয়েছে ৬০টাকা।
রৌমারীর কোদালকাটি এলাকার মমিন মিয়া জানান,উত্তরবঙ্গের মধ্যে জোড়গাছ হাটে খাদ্য শস্য,পশুসহ বিভিন্ন পণ্যের খাজনা সবচেয়ে বেশী।ধান,পাট,বেগুন,মরিচ,চিনা,ভূট্টা,পাট খড়ি,ধনচেসহ বিভিন্ন পন্যের উপর অতিরিক্ত খাজনা নেয়া হলেও দেয়া হয় না কোন রশিদ। কোথায় সাটানো হয়নি কোন টোল কিংবা খাজনার তালিকা।
পরে পশুর হাটে গেলে দেখা যায়,প্রতিটি গরু বিক্রির জন্য ক্রেতার নিকট হতে ৪শ টাকা এবং বিক্রেতার নিকট হতে ২শ টাকা নেয়া হলেও বিক্রির চালানে কোন খাজনা লেখা হয়নি।ইজারাদার উকিল আমিনের সাথে কথা হলে তিনি জানান অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়ে কোন কথা বলেনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.মাহবুবুর রহমান বলেন, হাটে সরকার নির্ধারিত মূল্যেই খাজনা আদায় করতে হবে। অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। শিগগিরই তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।