মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র জগতের প্রাণকেন্দ্র লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের হলিউড। সারা পৃথিবীর বাঘা বাঘা নায়ক-নায়িকাদের পদচারণায় মুখরিত থাকে হলিউড। কিন্তু করোনা উদ্ভুত পরিস্থিতিতে হলিউড এখন যেন প্রাণহীন, করোনা আতঙ্কে বিখ্যাত সেই নায়ক-নায়িকারাও এখন ঘরবন্দি। তবে আমেরিকার কঠিন সময়ে হলিউড হিরো হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন আরেক নায়ক। তিনি চলচ্চিত্রের নায়ক নন, করোনা যুদ্ধের নায়ক বাংলাদেশের ডা. ফেরদৌস খন্দকার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডা. ফেরদৌসের বিরোচিত ভূমিকার কথা আমেরিকার বাংলাদেশি প্রবাসীদের মুখে মুখে। প্রবাসীদের কাছে ভরসার প্রতীক মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। নিউইয়র্কের এই করোনাযোদ্ধা বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে ছুটে আসছেন। নিউইয়র্কের করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে, আর বাংলাদেশের পরিস্থিতি খারাপের দিকে। জন্মভূমির এমন পরিস্থিতিতে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। একটি চিকিৎসক দল নিয়ে আগামীকাল শনিবার বিশেষ একটি ফ্লাইটে দেশে ফিরছেন। এবার নিজ দেশের মানুষকে করোনা থেকে বাঁচানোর যুদ্ধে শামিল হবেন।
করোনার তাণ্ডবে নিউইয়র্কসহ সারা আমেরিকায় মারা গেছেন ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ, আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২০ লাখ মানুষ। যেখানে প্রতিদিনই ছিলো লাশের মিছিল, মৃত্যুর ভয়ে নিউইয়র্কের অনেক চিকিৎসকই যখন ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিলেন, সেই সময় ডা. ফেরদৌস খন্দকার মাথা উঁচু করে বীরের মতো লড়েছেন করোনার বিরুদ্ধে। যিনি নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করেই করোনা রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন। বিশেষ করে অসুস্থ প্রবাসী বাংলাদেশিদের কারো ফোন পেলেই ছুটছেন গাড়ি নিয়ে, সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং খাদ্য সামগ্রীও। হাজার হাজার মাইল দূরের আমেরিকার সিটিতে করোনা রোগীদের দিন-রাত চিকিৎসাসহ সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমেরিকার নিউইয়র্কের মৃত্যুপুরীতে বসবাস করেও এক মুহূর্তের জন্য ভোলেনি রোগীর সেবা দিতে, কাজটি খুবই ঝুকিঁপূর্ণ জেনেও হাসপাতাল নয়, সোজা বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিনই ১৫ থেকে ১৮ ঘণ্টা বিরামহীন সেবা দিয়েছেন করোনা আক্রান্ত প্রবাসী বাংলাদেশের। এমন ব্যস্ততার মধ্যেই একটি দিনের জন্য ভোলেনি বাংলাদেশের মানুষের কথা। দেশের মহাদুর্যোগের সময়ে প্রতিদিনই দুই বেলা রুটিনমাফিক ফেসবুক-ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে এসে করোনা বিষয়ে নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। তার এই কর্মকাণ্ড দেশটির প্রভাবশালী বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারও করেছে। ধীরে ধীরে নিউইয়র্ক শহরের করোনা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে, আক্রান্তের হার এবং মৃত্যুর হার কমছে। ঠিক এমন সময় বাংলাদেশের মৃত্যু এবং আক্রান্তের হার যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলছে। দেশের এমন দুর্দিনে বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষের কথা ভেবে নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশে চলে আসছেন। বিশেষ একটি ফ্লাইটে নিজ দেশে ফিরবেন তিনি।
ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, নিউইয়র্কের অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। এখানকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ঘরে থাকার কারণে বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে করোনা আক্রান্ত নেই বললেও চলে। কিছুদিন আগেও বাসায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি। এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো। অন্যদিকে বাংলাদেশে আস্তে আস্তে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য আমার মনে হচ্ছে মহামারির এই দুঃসময়ে দেশের মানুষের পাশে থাকাটা খুবই জরুরি।
তিনি আরো বলেন, দেশ আর দেশের মানুষের জন্য সবসময় মন কাঁদে। ফ্লাইট চালু থাকলে আরো আগেই যেতাম। আমার দ্বারা যদি কিছু মানুষের উপকার হয় তাহলে সেটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এলাকার সাধারণ মানুষের চিকিৎসার পাশাপাশি সচেতনতা এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি এই মুহূর্তে খুব প্রয়োজন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এলাকায় গেলে আমি সেই কাজটি খুব সহজেই করতে পারবো।
ডা. ফেরদৌস খন্দকার আরো বলেন, ঢাকায় এবং কুমিল্লায় সাধারণ রোগীদের জন্য একটি আর্জেন্ট কেয়ার ক্লিনিক করতে চাই দুই মাসের জন্য। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। আবার করোনার ভয়ে বহু মানুষ হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছে। অথচ তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা খুব প্রয়োজন। এসব মানুষের জন্যই তিনি এই বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেবেন। আর করোনার জন্য কেউ পরামর্শ চাইলে সেব্যাপারে নিজের অভিজ্ঞতানুযায়ী সহযোগিতা করবেন বলেও জানান তিনি।