তিমির বনিক, স্টাফ রিপোর্টার: চা শ্রমিক নারী দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকায় কাজ করেন ‘চা কন্যা’ খাইরুন আক্তার। অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সম্মুখ সারির নারী যুদ্ধা তিনি। সেই চা-কন্যা এবার হয়েছেন উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান।
বুধবার (৫ জুন) চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী আরও ৪ প্রার্থীকে পেছনে ফেলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন খাইরুন আক্তার। নির্বাচনে কলস প্রতীক নিয়ে খাইরুন আক্তার পেয়েছেন ৭৬ হাজার ২৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী সাফিয়া আক্তার হাঁস প্রতীকে পেয়েছেন ১২ হাজার ২১ ভোট। এছাড়া আবিদা খাতুন ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ৮ হাজার ৮৭৩ ভোট, মোছাঃ ইয়াছমিন আক্তার মুক্তা বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৪ হাজার ১৬৮ ভোট এবং পারুল আক্তার পদ্ম ফুল প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ১৪৮ ভোট। চুনারুঘাট উপজেলার ৮৫ কেন্দ্রে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯০৮ জন। খাইরুন আক্তার হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের চান্দপুর চা–বাগানের শ্রমিক। চা–শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বরাবরই সোচ্চার ভূমিকায় ছিলেন তিনি। তাকে প্রার্থী করতে চা–বাগানের সদস্যরা রীতিমতো সভা ডেকে মনোনয়ন ফরম কেনা, প্রচারণাসহ সব কাজ করেছেন। চা–শ্রমিকেরা ১০ টাকা করে চাঁদা তুলে এবং নানাজনের কাছ থেকে সহায়তা নিয়ে নির্বাচনী খরচের ব্যবস্তা করেছেন। নির্বাচনী খরচ মেটাতে খাইরুন আক্তারের মা মল্লিকা খাতুন হাঁস–মুরগি বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন খাইরুন, এছাড়া ছিল মানুষের চাঁদা–সহায়তা। এভাবেই নির্বাচনে খরচ করছেন তিনি। চা-শ্রমিকদের চাঁদা প্রসঙ্গে খাইরুন আক্তার তার ফেসবুকে ভোটের আগে লিখেছেন, ‘এই ১০ টাকা আমার জীবনে অনেক বড় পাওয়া। এই ১০ টাকায় রয়েছে চা শ্রমিক মা–ভাই–বোনদের অক্লান্ত পরিশ্রম। জড়িয়ে আছে সম্মান, বিশ্বাস, ভালোবাসা, আর অনেক দিনের স্বপ্ন। এই নির্বাচনে আমি অংশগ্রহণ করা মানে আমার প্রতিটা চা শ্রমিক মা–ভাই–বোন অংশগ্রহণ করেছেন। ধন্যবাদ আমার চা বাগানের চা শ্রমিক মা–ভাই–বোনদের আমাকে ১০ টাকা করে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।’ফেসবুক পোস্টে নিজের নির্বাচনী পোস্টারের ছবি জুড়ে দিয়েছেন খায়রুন। পোস্টারের নিচে নেখা আছে, ‘প্রচারে চুনারুঘাট উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ।’২০২২ সালে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চা–শ্রমিকদের রাজপথের আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে পরিচিত মুখ খাইরুন আক্তার। মিছিলের সামনে থেকে তিনি স্লোগান ধরেন। তাতে অন্য শ্রমিকেরা কণ্ঠ মেলান।
২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের চা–বাগানের শ্রমিকেরা কেন পেছনে পড়ে আছে’ শীর্ষক এক সংলাপে খাইরুন চা–শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরেন।বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সমিতির সভাপতি খাইরুন আক্তার।