তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের চা বাগানগুলোতে অতিবৃষ্টির পর এবার প্রচণ্ড গরমের প্রভাবে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। উৎপাদনের ভরা মৌসুমে এখন উৎপাদন কমেছে ৮০ শতাংশ। পোকা মাকড়ের আক্রমণে অধিকাংশ বাগানের এখন বেহাল দশা। বাগান সংশ্লিষ্টরা এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশাই দেখছেন না।সরজমিনে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, চা গাছের পাতাগুলো লাল হয়ে পড়েছে। অনেক গাছের কচি পাতা পোকা-মাকড়ের আক্রমণে ক্ষত বিক্ষত। অথচ এই সময়ে থাকার কথা ছিল সবুজ এবং সতেজ পাতা। কিছু কিছু এলাকায় চা পাতা চয়ন করা হলেও সেই পাতাগুলোর গুণগত মান খারাপ। তবে বেশীরভাগ এলাকায় নতুন পাতা গজায়নি। চানপুর, কাপাই এবং দেউন্দি চা বাগানের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর গোল্ডেন শাওয়ার বা আগামবৃষ্টিতে যথাসময়েই শুরু হয়েছিল চায়ের নতুন মৌসুম। কিন্তু আষাঢ় মাসের শুরু থেকেই অতি বৃষ্টিতে চায়ের উৎপাদনের বিঘ্ন ঘটে। এরপর এক সপ্তাহ যাবৎ দেখা দেয় প্রচণ্ড গরম। এই গরমে চা বাগানগুলো মারাত্মক আকারে লাল মাকড়শা বা রেড স্পাইডার এবং হেলোফেলটিস বা মশার আক্রমণও দেখা দেয় পুরো চা বাগান এলাকাজুড়ে। পাশাপাশি লিপ্রাস নামক এক রোগ এবং ত্রিপস নামে এক ধরনের মশারও উপদ্রব দেখা যায় সর্বত্র। ফলে চা বাগানগুলোতে পাতা লাল রঙ ধারণ করে। ফলে উৎপাদন কমে যায় ৮০ শতাংশ। উৎপাদিত চায়ের গুণগত মানও কম হচ্ছে।
চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি চা বাগানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারী ব্যবস্থাপক জানান, তারা বাগানে ব্যাপকভাবে রেড স্পাইডার এর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তারা ইতোমধ্যে স্প্রে ও কেমিক্যাল ব্যবহার করলেও এখনও অবস্থার তেমন একটা উন্নতি হচ্ছে না।
চুনারুঘাট উপজেলার চানপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ জানান, অতিবৃষ্টি ও প্রচণ্ড গরমে তার বাগানে ৮০ শতাংশ উৎপাদন কমে গেছে। লাল মাকড়সা এবং মশার আক্রমণের পাশাপাসি লিপ্রাস ও ত্রিপস মশার উপদ্রব দেখা দিয়েছে সর্বত্র।
তিনি আরো জানান, অতিবৃষ্টিতে ওয়াশ আউট হয়ে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। আবার অত্যাধিক গরমে লাল মাকড়শার উপদ্রব বাড়ছে। এই বৈরী আবহাওয়া চলতে থাকলে এ বছর উৎপাদন ঘাটতি হবে। তবে সামনে যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয় তাহলে এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে। কারণ এখনও মৌসুমের অনেক সময় রয়ে গেছে।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট বিটিআরআইর পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, প্রকৃতিতে আমাদের হাত নেই। তবে বাগানগুলোকে এর জন্য করণীয় বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ওয়েবসাইটেও করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। আবহাওয়ার উন্নতি হলে এখনও বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন।