তিমির বনিক, মৌলভীবাজার থেকে: চারদিকে সবুজে ঘেরা পাহাড়। উপরে খোলা আকাশ, গাঢ় সবুজের সমারোহে পাহাড়, নেই কালো ধোয়া কিংবা ইট-পাথরের জঞ্জাল। শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো মনোরম চা বাগানের দৃশ্যে চারদিকে নয়নাভিরাম। সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত একটি লেক। লেকটি দেখতেও সত্যিই অপূর্ব। লেকের ঝলমল জল, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা-শালুকের উপস্থিতি আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে পরিবেশ। আর এই লেকটি দর্শন করতে হলে আপনাকে যেতে হবে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মাধবপুরে।
মাধবপুর লেকের কথা জানাচ্ছি। মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করে আপনাকে হাঁটতে হবে তিন থেকে চার মিনিট পথ। তারপরই একটি বাঁধ দেখতে পাবেন। বাঁধের অপর প্রান্তেই লেকের শুরু হয়। আস্তে আস্তে যতই সামনের দিকে এগোতে থাকবেন, ততই ভালো লাগা বাড়তে থাকবে হাতছানি দিয়ে ডেকে নিয়ে যাবে। ছোট-বড় পাহাড়ের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকাভাবে বয়ে চলেছে লেকটি। লেকের মাঝে ফুটে থাকা হাজারো বেগুনি শাপলার সৌন্দর্য দেখে শুধু মুগ্ধ নয়নে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয়।
হয়তো এরই মাঝে একঝাঁক পাখি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাবে তাদের সুরের মূর্ছনা দিয়ে। ছবির মতো সুন্দর সারি সারি চা গাছ বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে উঁচু উঁচু টিলা, গাঢ় সবুজ পাহাড় আর মাথার ওপর সুনীল আকাশ। লেকের স্বচ্ছ নীলাভ জলে আকাশের প্রতিবিম্ব আর ফুটে থাকা অসংখ্য শাপলা-শালুকের অলংকরণ যেন শিল্পীর কল্পনার রঙে আঁকা কোনো নিখুঁত ছবি।চারদিকে সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি তার অপূর্ব রূপের মায়া ছড়িয়ে বসে আছে চুপচাপ। সবুজ পাতার সতেজ গন্ধ আর চা বাগানের মনোরম দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের আনমনে নিয়ে যায় এক ভিন্ন জগতে। মাধবপুর লেকটি যেন প্রকৃতির আপন খেয়ালে গড়া এক নৈসর্গিক সৃষ্টি।
কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে পাত্রখলা চা বাগানে লেকটির অবস্থান। এটি মৌলভীবাজার শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ও শ্রীমঙ্গল থেকে ১০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। মাধবপুর লেকে যেতে হলে আপনাকে প্রথমে শ্রীমঙ্গল বা কমলগঞ্জ আসতে হবে। এরপর কমলগঞ্জের ভানুগাছ চৌমোহনা থেকে মাধবপুর লেক। আপনি ব্যক্তিগত গাড়ি বা বাসে অথবা সিএনজি করে সেখানে যেতে পারেন।
এ ছাড়া চাইলে শ্রীমঙ্গল চা বাগানের দিক থেকেও সিএনজি ভাড়া করে চলে যেতে পারেন মাধবপুর লেক। শ্রীমঙ্গল শহর পেরিয়ে কিছুটা পথ যাওয়ার পরই রাস্তার দুই পাশে দেখতে পাবেন ঘন সবুজে ঘেরা চা বাগান। ছোট-বড় পাহাড়ের ওপর সারি সারি চা গাছ লাগানো। আর এই পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে আঁকাবাঁকা রাস্তা চলে গিয়েছে মাধবপুর লেকের দিকে। এই অপূর্ব পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন মাধবপুর লেকে।
ঢাকা থেকে সড়ক ও রেলপথে সরাসরি শ্রীমঙ্গল যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিবহন, সিলেট পরিবহন ইত্যাদি পরিবহনের নন-এসি বাস ছাড়ে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্য।