সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতা তুলতে এসে চরম দুর্ভোগের ও অনিয়মের স্বীকার হচ্ছেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার হাজার হাজার প্রবীণ ভাতাভোগী। গত রোববার কিশোরীগঞ্জ কেজি স্কুল মাঠে ভাতা নিতে এসে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে থেকে অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মহসিন আলী (৯০) নামে এক ভাতাভোগী। এদিকে তালিকায় অনেক জীবিত বৃদ্ধ ভাতাভোগী মানুষকে মৃত দেখানোয় তারা ভাতা না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যান।
উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, করোনা কোভিট-১৯ মহামারি এবং পবিত্র ইদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ১৩ হাজার ৯৫০ জন প্রতিবন্ধি, বিধবা ও বয়স্ক ভাতাভোগেী ব্যাক্তিকে তিনমাসের স্থলে ছয়মাসের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিজন প্রতিবন্ধি ব্যক্তিকে ৭৫০ টাকা মাসিক হারে ৬ মাসে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, বয়স্ক ও বিধবা মাসে ৫০০ টাকা হারে ৬ মাসে ৩ হাজার করে টাকা পাবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনালী ব্যাংক শাখা কিশোরীগঞ্জ কেজি স্কুল মাঠে, কিশোরগঞ্জ কৃষি ব্যাংক শাখা গদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে, গাড়াগ্রাম কৃষি ব্যাংক গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ভাতার টাকা বিতরণ করছেন। করোনা সংক্রমের ঝুঁকি থাকলেও ভাতাভোগীরা সামাজিক দুরুত্ব মানাতো দুরের কথা কারো মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।
চাঁদখানা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রাহেলা বেগম (৮২) এবং ময়নারানী রায় (৭০) বলেন, বাবা আমরা গত তিন মাস ধরে ভাতা নিতে এসে হয়রানীর শিকার হচ্ছি। ব্যাংকে ভাতা নিতে গেলে ব্যাংকের লোকজন বলছে সমাজসেবা অফিস থেকে পাঠানো তালিকায় আপনাদের মৃত্যু দেখানো হয়েছে। আমরা জীবিত থাকার পরেও অফিসের ভুলে টাকা তুলতে না পেরে অনেক কষ্ট করে জীবন যাপন করছি।
নিতাই ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার মেয়ে রফিকা বেগম শারিরিক প্রতিবন্ধি। আমার মেয়ের প্রতিবন্ধি ভাতা হয়েছে বই নম্বর ১৪২৭, হিসাব নম্বর ৫৫৯। গত ১২ মে কৃষি ব্যাংকের দালাল পেয়ারুল ইসলাম গোপনে আমার প্রতিবন্ধি মেয়ের স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করে। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক বিষয়টি ব্যাংকের ম্যানেজারকে জানালে তিনি পেয়ারুলের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করে আমাকে দিয়েছে।
কিশোরগঞ্জ কৃষি ব্যাংক শাখার ম্যানেজার আফজালুল হক বলেন, পেয়ারুল এবং প্রতিবন্ধি মেয়েটির বাড়ি একই এলাকায় হওয়ার কারণে সে মেয়েটির বাবার কাছ থেকে বই নিয়ে টাকা উত্তোলন করেছিল। টাকা উদ্ধার করে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, অনেক সময় ভুল হতে পারে যাদের এ ধরনের সমস্যা হয়েছে তারা অফিসে আসলে সব ঠিক করে দেব।