
ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি: ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চর হরিরামপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ কবির খান আ’লীগ সরকার পতনের ছয় মাস কাল পার হলেও পদ্মা নদীর চরাঞ্চলে এখনো বহাল তবিয়তে রাম রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তিনি উক্ত ইউনিয়নের পশ্চিম চরশালেপুর গ্রামের মৃত ছুরমান খানের ছেলে কবির খান (৫২)। কবির খান বিগত ১৭ বছরে চরাঞ্চলের বহু অসহায় পরিবারের প্রায় সাড়ে ৬শ’ বিঘাত উর্বরা ফসলী জমি জোর পূর্বক জবর দখল, মুন্সিরচর নামক হাটে প্রায় অর্ধশত দোকান পরিজন নির্মান ও বিক্রয় বাণিজ্য সহ তার লাঠীয়াল বাহিনী দিয়ে এলাকার বড় বড় বৃক্ষ বাগান পেশী শক্তির জোরে দখল করে চরের অধিপতি সেজে এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের ছয় মাস কাল পার হলেও চরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ দুস্থরা ফিরে পায়নি তাদের হারিয়ে যাওয়া বেদখলীয় উর্বরা ফসলী জমিগুলো। জানা যায়, বাংলাদেশ আ’লীগের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহর ছত্রছায়ায় ওই চরের নেতা কবির খান ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত উপজেলা পদ্মা নদীর অপর পারের চর হরিরামপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক পদে বহাল থেকে চরাঞ্চলে একচ্ছত্র আধ্যিপত্য বিস্তার করেন এবং তার লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে পদ্মার চরে রাম রাজত্ব কায়েক করেন। পরবর্তিতে পর পর দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজী জাফর উল্লাহ পরাজিত হলে কবির খান ক্ষমতার খুটি পাল্টিয়ে ফেলেন। তিনি ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ২০২০ সালে শেখ হাসিনার ভাতিজা ও ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের দলে যোগ দেন। সেই থেকে কবির খান উক্ত স্বতন্ত্র এমপি’র ছত্রছায়ায় উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়ন আ’লীগের প্রস্তাবিত কমিটির আহবায়ক পদেও বহাল রয়েছেন। আর এ ক্ষমতার জোরে কবির খানের জুলুম অত্যাচার ও দখলদারিত্ব দিন দিন বেড়ে ওঠতে থাকে। তার হীন কর্মকান্ডের কারনে পদ্মার চরাঞ্চলে সে ‘ভুমি খেকো বাঘ’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো জানায়, বিগত ক’য়েক বছরে উক্ত আ’লীগ নেতা কবির খান চরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৬শ’ বিঘাত উর্বরা ফসলী জমি জবর দখল করে নিয়েছেন। উক্ত আ’লীগ নেতা বহু কৃষক পরিবারের অসহায়ত্বর সুযোগ নিয়ে তার লাঠীয়াল বাহিনী পাঠিয়ে জোর পূর্বক উর্বরা ফসলী জমি জবর দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের ১৩ নং চর শালেপুর মৌজা, ১৪ নং চর শালেপুর মৌজা, মুন্সির চর মৌজা ও নোয়াই মোল্যার ছ্যাম মৌজার ফসলী মাঠ থেকে উক্ত আ’লীগ নেতা প্রায় সাড়ে ৬শ’ বিঘাত বা সোয়া ২শ’ একর ফসলী জমি কব্জা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চরাঞ্চলে ওই আ’লীগ নেতার লাঠীয়াল বাহিনীর মধ্যে আবজাল খান (৩৮), আজিজ খান (৪৫), আজাহার খান (৪২), মাসুদ মোল্যা (৩৫), শেখ হোসেন (৪০), শাহীন বেপারী (৪৫) ও সিকান্দার খান (৪৭) এরা নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। ওই আ’লীগ নেতার কবলে পড়ে ফসলী জমিহারা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মধ্যে রবিবার উপজেলার চর শালেপুর গ্রামের অধিবাসী মৃত নৈমদ্দিন মোল্যার ছেলে সামচুদ্দিন মোল্যা (৬০) জানায়, “ প্রায় তিন বছর আগে আ’লীগ নেতা কবির খান আমাদের ১৪ নং চরশালেপুর মৌজায় বাপ দাদা ও শরীকানাদের নামীয় আরএস ও এস রেকর্ডীয় সর্বমোট ১৭৫ একর উর্বরা জমির সবটুকু তার লাঠীয়াল বাহিনী নিয়ে এসে জবর দখল করে নিয়েছে। সে সময়ে তার দেড়শো লাঠীয়াল বাহিনী জমিতে গিয়ে আমাদের পাকা ধান কেটে নিয়ে গেছে। আমি থানায় অভিযোগ করলে উক্ত জমিতে পুলিশ গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশের সামনেই কবির খানের লোকজন ধান কেটে নিলেও পুলিশ কিছুই করতে পারে নাই। অসহায় কৃষক সামচুদ্দিন মোল্যা আরও জানায়, এরপর বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও আমি কোনো ফল পাই নাই। এমনকি, ফরিদপুর কোর্টে একটি মামলা করেছিলাম কিন্তু টাকার অভাবে আমি মামলাও চালাতে পারে নাই। ফলে বাপ-দাদার আমলের সবটুকু সহায় সম্পত্তি কবির খানের কবলে হারিয়ে বর্তমানে সামচুদ্দিন মোল্যা দিন মজুরের কাজ বেঁচে আছে বলে জানায়”। আরেক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার উক্ত ইউনিয়নের আমিনখার ডাঙ্গী গ্রামের মৃত নাজির মোল্যার ছেলে ভুমিহীন মোসলেম মোল্যা (৬২) জানায়, “ আামর ত্রিশ বছরের দখলীয় বৃক্ষ বাগান সহ ৬ একর ফসলী জমি কবির খান ক্ষমতা ও পেশী শক্তির জোরে জবর দখল করে নিয়েছে। সে সময় আমার ছেলেরা বাঁধা দিতে গেলে কবির খানের লাঠীয়াল বাহিনী লাঠীসোটা দিয়ে ছেলেদের এলোপাথারী পিটিয়ে মাথায় গুরুতর রক্তাক্ত জখম সহ মুমূর্ষ অবস্থায় ফেলে রেখে যায়। সে আমলে মামলা মোকাদ্দমা করেও কোনো ফল পাই নাই”।
এছাড়া আ’লীগ নেতা কবির খান একই কায়দায় উক্ত ইউনিয়নের পশ্চিম চরশালেপুর গ্রামের আবুল কালামের এক একর ফসলী জমি, শহীদ মোল্যার এক একর, চান্দা খানের দুই একর জমি, ১৩ নং চরশালেপুর মৌজার মোঃ মোনায়েম খানের চার একর ফসলী জমি, শেখ শুকুরের দুই একর জমি, করিম খালাসীর দেড় একর জমি, মোতালেব মাষ্টারের দুই একর জমি, নালু মোল্যার দেড় একর, শেখ মানিকের দুই একর, শেখ মজিবরের দুই একর, সোহরাব খানের দুই একর ও মোসলেম খানের এক একর সহ প্রায় সোয়া ২শ’ একর বা সাড়ে ৬শ’ বিঘাত ফসলী জমি আ’লীগ সরকার আমলে জবর দখল করে এখনো বহাল তবিয়তে চরাঞ্চলে রাম রাজত্ব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কবির খান প্রায় চার বছর আগে উক্ত ইউনিয়নের মুন্সিরচর নামক গ্রামের ভুমীহীনদের প্রায় অর্ধশত বিঘাত জমি দখল করার পর ড্রেজার মেশিন দিয়ে ছয়মাস কাল মাটি কেটে ভিটি বেধে চরাঞ্চলে মুন্সিরচর নামক একটি হাট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গত বছর সেই হাটের ৫০টি দোকান পজেশন প্রতিটি ৪ লাখ টাকা করে মোট ২ কোটি টাকা পজেশন বিক্রি করে দুস্থদের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করেছেন। তবে কবির খানের দখল দারিত্বর বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ ক’য়েকটি পরিবার আদালতে ও টিআইবিতে মিলে অন্ততঃ ৭/৮টি মামলা করেছিল। সেসব মামলাগুলো চলমান থাকলেও কবির খান এখনো আইন-আদালতের কোনো তোয়াক্কা করছেন না বলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিাবারগুলো হতাশায় জীবন কাটাচ্ছেন। রবিবার কবির খানের নামে মামলাগুলোর বিষয়ে চরভদ্রাসন থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ রোজিউল্লাহ খানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, “আমার নতুন পোষ্টিং হয়েছে।
Drop your comments: