এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেছেন— দুই হাজার শহীদের রক্ত, শত শত মানুষের পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব, এবং হাজারো নির্যাতিত মানুষের ত্যাগ-তিতিক্ষার ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয়েছিল চব্বিশের ৩৬ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান। জনআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রয়োজনীয় সংস্কার, খুনি–লুটেরাদের দৃশ্যমান বিচার এবং সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখা গেলেও একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এক জটিল গোলকধাঁধা সৃষ্টি করেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, এই গোলকধাঁধার সুযোগে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের হাতে চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানা তুলে দেওয়ার আয়োজন পাকাপোক্ত করছে সরকার। এ বিষয়ে গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর বিশিষ্ঠ পরিবেশ বিজ্ঞানী নজরুল ইসলাম বলেন, বন্দর–সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা অপারেশন খরচ বৃদ্ধির আশঙ্কা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলোও এ বিষয়ে সোচ্চার। আমরা কোম্পানি আইন ১৯৯৪, শ্রম আইন ২০০৬সহ সংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামো বিবেচনায় রেখে আন্তর্জাতিক দরপত্র নীতিমালা অনুসরণ করে জনগণকে অবহিত করে বন্দর পরিচালনার দাবি জানিয়েছিলাম। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দুর্নীতি ও দীর্ঘসূত্রতা থেকে বন্দরকে মুক্ত করা এবং জাতির সার্বভৌমত্বসহ জুলাই বিপ্লবের টার্গেট—সবই বিবেচনায় রাখতে হবে।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালে এপিএম টার্মিনালের সিইও যখন শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে আসে, তখনই বন্দর মহলে আলোচনায় আসে—কন্টেইনার ব্যবসায় জড়িত হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়ের মাধ্যমে এপিএম বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং তিনিই হবেন তাদের স্থানীয় অংশীদার। একইভাবে পানগাঁও টার্মিনালের দায়িত্ব যে সুইস কোম্পানিকে দিতে সরকার যাচ্ছে, তার স্থানীয় এজেন্ট আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নগর আমীর আরও বলেন, নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনাল ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার উদ্যোগও আওয়ামী লীগ আমলেই সাবের হোসেন চৌধুরীর মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। তিনিই হচ্ছেন সম্ভাব্য স্থানীয় অংশীদার—এ কথা এখন সর্বত্র আলোচিত।
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের হাতে বন্দর তুলে দেওয়ার জন্য ছাত্র–শ্রমিক–জনতা তাদের জীবন উৎসর্গ করেনি। জুলাই শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
