এনামুল হক রাশেদী, চট্টগ্রামঃ চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন মির্জারপুলস্থ ডেল্টা হসপিটালের ডক্টর’স চেম্বারের ড্রয়ার ভেঙ্গে লক্ষাধিক টাকা চুরি করেছে মোহাম্মদ মামুন নামে এক প্রতারক। মামুন সাতকানিয়া থানাধীন গাটিয়াডেঙ্গা আলীর বর বাড়ির মোঃ আবু তাহেরের ছেলে। সে তার পরিবার নিয়ে নগরীর কালুরঘাট সি এন্ড বি এলাকায় বসবাস করে। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে।
বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, মামুন দীর্ঘ দিন ধরে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের চেম্বারে রোগী এবং রোগীদের বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট নিয়ে দেনদরবার করত। সর্বশেষে ধূর্ত এই মামুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক আর্থোস্কোপিক, জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট ও অর্থোপেডিক এন্ড ট্রমা সার্জন ডাঃ জাবেদ জাহাঙ্গির তুহিনের এটেন্ডেস হিসাবেও বেশ কিছুদিন কাজ করেছে, রোগীদের সাথে বি়ভিন্ন প্রতারনা, অনৈতিক লেনদেন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রতারনার অভিযোগে তাকে ডক্টরস চেম্বারের সহকারী দায়িত্ব থেকে অব্যাহত দেওয়া হলেও ধূর্ত মামুন নিয়মিত ডাক্তার তুহিনের চেম্বার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করত এবং ডাক্তারদের অজান্তে অন্যান্য ডক্টরদের চেম্বারেও রোগী পাটানোর দালালী করত বলে জানা যায়, সে সুযোগে সে রোগীদের কাছ থেকেও অনৈতিকভাবে টাকা পয়সা আদায় করত, ফলে ডাক্তার তুহিনের চেম্বার থেকে তাকে বের করে দেওয়া হলেও ডেল্টা হসপিটাল কতৃপক্ষ এবং নিরাপত্তা ও সিকিউরিটি বিভাগ জানত মামুন ডাঃ তুহিনের চেম্বারের দায়িত্বে আছে। সে সুবাধে বিশেষজ্ঞ এ ডাক্তারের চেম্বারের সবকিছুই মামুনের জানা ছিল। ২২ অক্টোবর ঘটনার পুর্বের দিন ডাঃ জাবেদ জাহাঙ্গির তুহিনের বর্তমান সহকারী রমিজ আহামদ ডাক্তারের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা নিজ দায়িত্বে সম্পুর্ন আমানতদারীতার সাথে ডাক্তার তুহিনের ডেল্টা হসপিটালস্থ চেম্বারের ড্রয়ারে রেখে তালা লাগিয়ে বাসায় চলে যায়। ঘটনার দিন ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার ভোর ৫.১৯ টায় প্রতারক মামুন হসপিটালে এসে যথারীতি ডাঃ তুহিনের চেম্বারের চাবী নিয়ে চেম্বারের তালা খোলে ভিতরে ঢুকে টাকা রক্ষিত ড্রয়ার টেনে ভেঙ্গে সেখানে রক্ষিত প্রায় লক্ষাধিক টাকা নিয়ে সুকৌশলে বের হয়ে গেলেও মামুন হসপিটালে ঢুকা, চেম্বারে ঢুকা, ড্রয়ার ভেঙ্গে টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার যাবতীয় তথ্য প্রমান সিসি ক্যামরার ফুটেজে সংরক্ষিত আছে। ঘটনার দিন সকাল ১০ টার দিকে ডাঃ তুহিনের সহকারী রমিজ আহমদ চেম্বারে এসে চেম্বার খোলার পর দেখতে পান যে, ড্রয়ারটি ভাঙ্গা এবং খোলা অবস্থায়, সেখানে রক্ষিত টাকা নেই। সাথে সাথে সহকারী রমিজ ঘটনাটি ডাঃ তুহিনকে জানালে হসপিটাল কতৃপক্ষ সিসিটিভি ক্যামরার ফুটেজ চেক করে এ অপকর্মের হোতা মামুনকে স্পষ্ঠভাবে চিহ্নিত করে, তাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করলেও ঘটনার পর থেকে তার সকল সেল ফোন নম্বর বন্দ রেখে আত্নগোপন অবস্থায় দিনাতিপাত করতে থাকে।
এদিকে ঘটনার ব্যাপারে জানতে মামুনের ভাই মিজানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, তার ভাই মামুনের বিভিন্ন অনিয়ম ও অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে তার সাথে দীর্ঘ দিন থেকে তাদের পরিবারের কারো সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ নেই বলে জানান।
মামুনের সন্ধানে পোশাক শ্রমিক হিসাবে কর্মরত মামুনের স্ত্রী ঘটনাটি সমাধানের আগ্রহ পোষন করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমে কালক্ষেপন করলেও অবশেষে সুচতুর মামুনের স্ত্রীও নিজেকে আড়াল করে নেয় বলে জানা যায়।
ডাঃ তুহিনের সহকারী রমিজ বলেন, “চেম্বারের সকল দায় দায়িত্ব আমার উপর, ডাক্তার সাহেব আমাকে বিশ্বাষ করে আমার উপর আস্থা রেখে টাকা পয়সার যাবতীয় দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দেন।” রমিজ বলেন, আমি ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে প্রতারক অকৃতজ্ঞ মামুনের বিরোদ্ধে ১২ নভেম্বর মঙ্গলবার পাঁচলাইশ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
পাচঁলাইশ থানার এসআই খোরশেদ আলম পিরোজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করা হয়েছে, সুষ্ঠ তদন্তসাপেক্ষে অপরাধীর বিরোদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
পাঁচলাইশ থানার ওসি সোলাইমান বলেন, ডেলটা হসপিটালের মত গুরুত্বপুর্ন একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এমন চুরির অভিযোগকে আমরা গুরুত্বের সাথে আমলে এনে আমরা অপরাধীর বিরোদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনে পাঁচলাইশ থানা সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।