পার সাইক্লোন আম্পান যে এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছিল, সুন্দরবনের সেই প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে ঝড়ের দশ দিন পরেও হাজার হাজার মানুষ নিজের ঘরে ফিরতে পারেন নি, কারণ তাদের ঘরবাড়ি বলতে অবশিষ্ট কিছুই নেই।
এদের কেউ আশ্রয় নিয়েছেন এলাকার পাকা স্কুল বাড়ি অথবা ত্রাণ কেন্দ্রগুলিতে, আবার অনেকে রাস্তাতেই রাত কাটাচ্ছেন।
এরই মধ্যে জোয়ার এলেই চাষ অথবা বাস্তু জমি আবারও জলে ডুবে যাচ্ছে।
সুন্দরবনের একটি অঞ্চল মিনাখাঁ।
জায়গাটা দক্ষিণ আর উত্তর ২৪ পরগণার সীমানা ঘেঁষা। সেখানকার ট্যাংরামারি গ্রামের বাসিন্দা পবিত্র সর্দার বলছিলেন, “আমাদের এই এলাকার প্রায় হাজার কুড়ি মানুষের কারোর বাড়িই আস্ত নেই। মাটির বাড়িগুলো তো পুরোই ধ্বংস হয়ে গেছে, আর পাকা বাড়ি যে কটা আছে, তাও জলের তলায়। জোয়ার এলেই জলে ডুবে যাচ্ছে। কেউ দোতলা স্কুল বাড়ি বা ত্রাণ কেন্দ্রতে আছে, অনেকে রাস্তাতেই ত্রিপল বা প্লাস্টিক টাঙিয়ে থাকছে।”
কলকাতার বাসিন্দারা যখন তিন, চার বা পাঁচ দিন বিদ্যুৎ না পেয়ে হাহাকার করছিলেন, তখন দশ দিন পরে বিদ্যুতের পরিস্থিতির কথা জিজ্ঞেস করতে একটু ব্যঙ্গাত্মক ভাবেই হাসলেন মি. সর্দার।
“আর বিদ্যুৎ! একটা খুঁটিও নেই। সব উড়ে গেছে। বিদ্যুতের আশা কেউই করছি না আপাতত। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে যেটা একেবারেই ভুলে গেছি আমরা সেটা হল করোনার কথা। সামাজিক দূরত্ব বলুন বা অন্য কোনও নিয়ম, কিছুই মানা সম্ভব নয় এই সময়ে,” বলছিলেন পবিত্র সর্দার।
সরকারি ত্রাণ সাহায্য কিছু কিছু এলাকায় যা পৌঁছচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
ত্রাণের ব্যাপারে একই চিত্র দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলাতেও।
ওই জেলাতেই আছড়িয়ে পড়েছিল সাইক্লোনটি।
মথুরাপুর অঞ্চলের পূর্ব রাণাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা আজিজুল হালদার অঙ্ক অনার্সের ছাত্র। কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে তিনি গ্রামের ক্ষয়ক্ষতির একটা হিসাব বানিয়েছেন।
মি. হালদার জানাচ্ছিলেন এলাকায় একটা বাড়ি ছাদও আর আস্ত নেই।
“গ্রামের প্রতিটা বাড়িরই ছাদ উড়ে গেছে। অ্যাসবেস্টস হোক বা খড়ের চাল – সবারই মাথার ওপরে আকাশ। ওইভাবেই থাকতে হচ্ছে মানুষকে। সেদিন আবার বৃষ্টি হল, পুরোটাই বাড়ির মধ্যে পড়ল।
”আমরা খোঁজ নিয়ে দেখলাম গ্রামের প্রায় দুশো আড়াইশো পরিবার খুবই সঙ্কটে আছে। ত্রাণ সেভাবে এখনও কিছু আসে নি। ত্রিপল দেওয়া হবে বলে আজ স্লিপ বিলি হয়েছে,” জানাচ্ছিলেন আজিজুল হালদার।
ঘূর্ণিঝড় এমন একটা সময়ে এসেছিল, যখন সারা দেশেই করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন চলছে। আর লকডাউনের কারণেই অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে অনেক পরীক্ষা।