‘ঘুসের টাকা না দেওয়ায়’ মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্পের ঘরের চাহিদা তালিকা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে পাঠাননি তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার হোসেন।
মঙ্গলবার বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে এমন লিখিত অভিযোগ করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোসলেম আলী হাওলাদার।
এছাড়াও ইউএনও বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ইউএনওর সব কার্যক্রম বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
জানা গেছে, তালতলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্পের ঘরের তালিকার চাহিদা চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় গত বছর ডিসেম্বর মাসে চিঠি দেন। ওই চিঠির আলোকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘরের তালিকা করে পাঠানোর নির্দেশ রয়েছে ইউএনও মো. কাওসার হোসেনের। কিন্তু চিঠি পেয়েই ইউএনও তালিকা করতে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ঘর প্রতি ২০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। ইউএনও দাবিকৃত ঘুষ দিতে রাজি হয়নি মুক্তিযোদ্ধারা। এ কারণে গত ৩০ জানুয়ারি প্রকল্পের ঘরের তালিকা চাহিদা তৈরির সভা ডেকে অজ্ঞাত কারণে সভা মুলতবি করেন তিনি।
ঘুসের টাকা না পেয়ে ইউএনও মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ঘরের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠাননি এমন অভিযোগ করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোসলেম আলী হাওলাদার।
এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ ও বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা ভবন সাজসজ্জা না করে ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইউএনও এমন অভিযোগও মুক্তিযোদ্ধাদের।
মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এমন অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে গত সোমবার প্রশাসনের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন তারা। দ্রুত বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে ইউএনওর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান মুক্তিযোদ্ধারা।
তালতলী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মো. মোসলেম আলী হাওলাদার বলেন, তালতলীর মুক্তিযোদ্ধারা ইউএনও কাছে অসম্মানের পাত্রে পরিণত হয়েছে। ইউএনও মুক্তিযোদ্ধাদের অহরহ হয়রানি, ব্যঙ্গ ও বিদ্রূপ করে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, বিজয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধা ভবনে সাজসজ্জা না করেই ২০ হাজার টাকা ইউএনও আত্মসাৎ করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে ইউএনওর এমন আচরণের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা তার সব কার্যক্রম বয়কট করেছি।
তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মো. তৌফিকুজ্জামান তনু বলেন, ইউএনও তালতলীতে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পরেছেন। মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে আসছেন।
তিনি আরও বলেন, ইউএনও উপজেলা প্রশাসনকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন।
তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার হোসেন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের কথা অস্বীকার করে বলেন, ডিপিপিতে তালতলী উপজেলায় ঘর বরাদ্দ নেই। তাই তালিকা করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ১০ জন ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিতে আমার কাছে আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। আমি ওই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা না দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ।
বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎসঃ যুগান্তর