গ্রিক দ্বীপে অবস্থানরত দেড় হাজারের মতো শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা করছে জার্মানি। সম্প্রতি লেসবসের মোরিয়া আশ্রয় শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।
৮ সেপ্টেম্বর লেসবস দ্বীপে আগুনে ভস্মীভূত হয় শরণার্থীদের আশ্রয় শিবির। এরপর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ১২ হাজারের মতো শরণার্থী আশ্রয় সংকটে ভুগছেন। খবর এএফপি।
গ্রিসের শরণার্থীদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ক্রমেই চাপ বাড়ছে। এ অবস্থায় এরই মধ্যে অভিভাবকহীন ৪০০ শরণার্থী শিশুকে আশ্রয় দেয়ার উদ্যোগে যোগ দিয়েছে বার্লিন। এক্ষেত্রে বার্লিন পুড়ে যাওয়া ক্যাম্পের ১৫০ শিশুকে আশ্রয় দেয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জার্মানি আরো দেড় হাজার শরণার্থী গ্রহণ করবে।
তবে তারা যে সবাই মোরিয়া ক্যাম্পেরই হবে তা নয়। মূলত জার্মানিতে শরণার্থীদের বিষয়ে আরো কিছু করার জন্য দাবির প্রেক্ষাপটেই এ নতুন পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছেন চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোরস্ট সিহোফের।
এদিকে এথেন্সে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কায়রিয়াকোস মিতসোতাকিসের সঙ্গে আলাপকালে ইইউ কাউন্সিলের প্রধান চার্লস মিশেল বলেন, অভিবাসন সংকট মোকাবেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নকে একটি সঠিক, শক্তিশালী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মোরিয়া শিবির পুড়ে যাওয়ার পর গ্রিস অস্থায়ী আশ্রয় স্থাপনের জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারকে বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। স্থানীয়রা এরই মধ্যে অভিবাসীবিরোধী বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার গ্রিসের অভিবাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মোরিয়া শিবিরের হাজার হাজার শরণার্থীর মধ্যে ৮০০ জনকে লেসবসের একটি অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো, করোনা পরীক্ষায় তাদের মধ্যে ২১ জনের ফল পজিটিভ এসেছে।
এদিকে লেসবস দ্বীপে অস্থায়ী শিবিরে তাঁবু স্থাপনের জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বহু শরণার্থীই নতুন এ শিবিরে প্রবেশ করতে চাইছেন না। তাদের ভয়, এখানে একবার প্রবেশ করলে হয়তো তারা আর বেরোতে পারবেন না। এ বিষয়ে মালিক নামে আলজেরিয়ার এক অভিবাসী বলেন, এ ক্যাম্পে আমাদের জন্য কিছুই নেই। নেই গোসলের ব্যবস্থা কিংবা ম্যাট্রেস।
আর এ অবস্থার মধ্যেই তিনি তার স্ত্রী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে সেখানে অবস্থান করছেন। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন আমাদের মাত্র একবেলা খাবার দেয়া হয়। পানি দেয়া হয় ছয় বোতল। তাছাড়া তারা বর্তমানে স্থানীয়দেরও ভয় পাচ্ছেন। গত বছর থেকেই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন স্থানীয়রা।
এ অবস্থার মধ্যেই নর্থ এজিয়ান অঞ্চলের গভর্নর কোস্তাস মাউন্টজোরিস স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মঙ্গলবার বিক্ষোভ আয়োজনের ডাক দিয়েছেন। তিনি লেসবসে নতুন শিবির স্থাপনের ঘোর বিরোধী। মূলত তিনি যে কোনোভাবে দ্বীপটি থেকে অভিবাসীদের উচ্ছেদ চাইছেন।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মোরিয়ায় গ্রিসের সব থেকে বড় অভিবাসী শিবির পুড়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনাকে ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস।
প্রাথমিকভাবে মাত্র দুই হাজারের মতো অভিবাসীর জন্য মোরিয়া আশ্রয় শিবির স্থাপন করা হলেও এখানে গত কয়েক বছরে এখানে আশ্রয় নেয় প্রায় ১৩ হাজার অভিবাসী। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই তারা আরো ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন।
সুত্র বণিক বার্তা