বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বালেন্দা গ্রামে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি’ গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেতে যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণ হওয়ায় আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে এ ব্যাপারে ঘোষণা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) দুপুরে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের দুই প্রতিনিধি শস্যচিত্র পরিদর্শন শেষে এ তথ্য দিয়েছেন।
জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে শস্যচিত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তুলতে গত ২৯ জানুয়ারি শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামে প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে চীন থেকে আনা ডিপ ভায়োলেট রঙের হাইব্রিড ও দেশের ডিপ গ্রিন ধানের চারা রোপণ করা হয়। এখন সেই চারাগুলো বড় হয়ে তাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি দেখা যাচ্ছে। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু জাতীয় পরিষদের উদ্যোগে ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিকৃতি তৈরির কাজ শুরু করে। সেদিন পরিষদের সদস্য সচিব কৃষিবিদ কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে চারা রোপণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।
আয়োজকরা জানান, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি গিনেস বুকে স্থান দিতে গত বছর থেকে কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির ব্যবস্থাপক ও ন্যাশনাল অ্যাগ্রোকেয়ারের কর্মকর্তা কৃষিবিদ আসাদুজ্জামান জানান, শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলার মধ্যেই বিশ্বের সর্ববৃহৎ শস্যচিত্র হিসেবে রেকর্ড গড়ার জন্য গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রতিনিধিরা পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আশা করা হচ্ছে, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিনে এ বিশ্বরেকর্ড অর্জিত হবে। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ জন নারী শ্রমিক প্রকল্পে কাজ করেছেন। তাদের সঙ্গে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন পুরুষ শ্রমিক ছিলেন। এ শস্যচিত্রের জন্য স্থানীয় কৃষকদের কাছে সাত মাসের জন্য ১০০ বিঘা জমি ইজারা নেওয়া হয়েছে। ফসল ওঠার পর মে মাসের দিকে জমিগুলো ফেরত দেওয়া হবে।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি পরিদর্শনে মঙ্গলবার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের প্রতিনিধি শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহমদ এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বালেন্দা গ্রামের প্রকল্প এলাকায় আসেন। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ম. আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ আসেন।
প্রকল্প পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করে ড. কামাল উদ্দিন আহমদ জানান, তারা সাক্ষী হিসেবে পরিদর্শনে এসেছেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেতে সব শর্ত পূরণ হয়েছে। চীনে শস্যচিত্র ছিল ৭৫ বিঘা জমিতে আর এখানে ১০০ বিঘা জমিতে। কোনও কৃত্রিমতা নেই। এক হাজার ২শ’ বর্গমিটার জমিতে বঙ্গবন্ধু শস্যচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তারা আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট দাখিল করবেন। তিনি আশা করেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অর্থাৎ ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আগেই শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পাবে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি কর্মসূচি বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে বিশ্ববাসীকে জানাতে চাই, আমরা বেঈমান, অকৃতজ্ঞ, হত্যাকারী জাতি নই। আমরা মহান নেতা জাতির পিতার আদর্শের সন্তান।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন– বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুর রহমান দুলু, শেরপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী শেখ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা শারমিন প্রমুখ।