দেশে এমন অনেক স্কুল রয়েছে যেগুলোতে ক্লাস নেন মাত্র একজন শিক্ষক। কিন্তু একটি স্কুলে একজন শিক্ষার্থী থাকার ঘটনা সম্ভবত দেশে একটিই। বর্তমানে একজন ছাত্র ও তিনজন শিক্ষক নিয়ে চলছে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় অবস্থিত ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলের একমাত্র ছাত্র অর্পন সরকার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, স্কুলটি নিচু জমিতে হওয়ায় এই শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয় না। স্কুলের আশেপাশে মাত্র ২৯টি পরিবার বাস করে; কোনো পরিবারেই স্কুলে পড়ার বয়সী কেউ নেই।
শিক্ষকদের মতে, এই কারণেও শিক্ষার্থীরা এই স্কুলে ভর্তি হতে আগ্রহী না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না রানী বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে তার স্কুলটি ৫ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে।
প্রকৃতপক্ষে, স্কুলে যাওয়ার জন্য কোনো পাকা রাস্তা নেই এবং বেশিরভাগ সময় অঞ্চলটি পানির নিচে থাকে। এর ফলস্বরূপ, এলাকার বাইরে বসবাসকারী পরিবারগুলো তাদের বাচ্চাদেরকে এই স্কুলে পাঠাতে চায় না।
ডুমুরিয়া উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিকদার আতিকুর রহমান জুয়েল বলেন, তারা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে স্কুলটি বন্ধ করে শিক্ষকদের অন্যত্র স্থানান্তর করার আবেদন জানিয়েছেন।
১৯৯১ সালে বিদ্যালয়টি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৩ সালে ২৬ হাজার নিবন্ধিত প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি সুবিধার আওতায় আনার সময় এই বিদ্যালয়টিও সরকারিকরণ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, শিক্ষার্থী স্বল্পতার কারণে শিক্ষকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ক্লাসে যান বলে অধিকাংশ সময় স্কুলটি বন্ধই পড়ে থাকে। স্কুলের প্রাঙ্গন বেশিরভাগ সময় ফাঁকা থাকায় স্থানীয় কৃষকরা ভবনটির বারান্দা ও মাঠ ব্যবহার করে আসছেন। তবে প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না রানী বলেন, ‘শিক্ষকরা প্রতিদিন স্কুলে আসলেও অলস সময় পার করা ছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না। একটা সময় ছিল যখন স্কুলে ৯০ জন ছাত্র ছিল। স্কুলের দুর্বল যোগাযোগব্যবস্থা এবং দুর্বল অবকাঠামোর কারণে ছাত্ররা অন্য স্কুলে চলে যায়।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ডুমুরিয়া উপজেলায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী ও এক হাজার শিক্ষকসহ ২১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫০টিরও কম শিক্ষার্থী রয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মোহাম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, তারা মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এই ধরনের স্কুল চিহ্নিত করতে এবং শীঘ্রই মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলেছেন। ‘এরই মধ্যে, আমরা বিভিন্ন জায়গায় ময়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো আরও কিছু স্কুল খুঁজে পেয়েছি। আমরা কম সংখ্যক শিক্ষার্থীযুক্ত স্কুলগুলোকে নিকটস্থ স্কুলের সাথে একীভূত করার পরিকল্পনা করছি’ তিনি বলেন। কিন্তু স্কুলগুলোর জন্য বরাদ্দ জায়গার কী হবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি।
কর্তৃপক্ষ এলাকার উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্কুলটির দুর্বল কর্মক্ষমতার পেছনে সরকারের উদ্যোগের অভাবকে দায়ী করেছেন স্থানীয়রা। ধামালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. মহসিন গাজী জানান, তার এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা খুবই খারাপ। বর্ষাকালে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। সরকারের উচিত স্কুল বন্ধ না করে এলাকার উন্নয়ন করা।
ধামালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, আমরা স্কুলের চারপাশে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছি। উন্নয়ন কাজ শেষ হলে এখানে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হবে বলে আমার বিশ্বাস।
উৎসঃ দৈনিক অধিকার