লাবিব হাসান, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি: কুয়াকাটা সমুদ্রে নিখোঁজ কথিত পর্যটক ফিরোজ শিকদার এখন মহিপুর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। বেনাপোল বন্দর থেকে মাইক্রোবাসে মঙ্গলবার ভোররাতে মহিপুর থানায় পৌঁছায় ফিরোজ তাঁর বড় ভাই মাসুম শিকদার। মঙ্গলবার দুপুরে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আবুল খায়ের গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে হাজির করে ফিরোজকে। কিভাবে তিনি কুয়াকাটা সৈকতে সাঁতার কাটতে নেমে চেন্নাই পৌঁছালেন, এমন প্রশ্ন ছিল সাংবাদিকদের। এসময় ফিরোজ সিকদারের কথাবার্তা ছিল অসংলগ্ন ও রহস্যে ঘেরা। তার কথা বার্তা শুনে মনে হয়েছে পুরো কাহিনীই মনগড়া কল্প কাহিনী।
ফিরোজ পুলিশ ও সাংবাদিকদের জানান, আত্মীয় ও বন্ধুদের সাথে কুয়াকাটায় বেড়াতে এসে গত ২৭ মে দুপুরে গোসল করার সময়ে ঢেউয়ের তোড়ে ডুবে যায়। ১৫/২০ মিনিট পর পানির উপরে উঠে একটি কলাগাছ পেয়ে সেটি নিয়ে ৫/৬ঘন্টা সাগরে ভাসার পর একটি ভারতীয় মাছ ধরার ট্রলারের জেলেরা তাকে উদ্ধার করে।
২৮ মে শনিবার শেষ বিকালে নৌবাহিনীর একটি জাহাজে তাকে তুলে দেয় জেলেরা। এরপর ৫/৬ দিন সেই জাহাজটি সাগরে চলার পর তাদের অফিসে নিয়ে আসে। তখন ফিরোজ জানতে চাইলে নৌ-বাহিনী বলে এটি চেন্নাই। এমন সময় একজন অফিসার কাগজে একটি স্বাক্ষর রেখে তাকে দুইহাজার রুপি দিলে এক হাজার পঞ্চাশ রুপি দিয়ে একটি মোবাইল সেট কিনেছিল।
পরে কোন এক অফিসার তাকে একটি মোবাইল সিম দিলে সেই সিম মোবাইলে ভরে গত শনিবার দুপুরে তার ভাই মাসুদ শিকদারকে ফোন দিয়ে সবঘটনা তুলে ধরে। এরপর বিকালে নৌবাহিনীর অফিসাররা চেন্নাই বিমানবন্দরে নিয়ে যায় এবং রাত ১০টায় বিমানে তাকে কোলকাতায় পাঠানো হয়। একদিন রাখার পর সোমবার সকালে তাকে ট্রেনে উঠিয়ে দেয়া হয়।
ট্রেন থেকে নেমে ৪০ টাকায় সিএনজিতে চড়ে দুপুরে বেনাপোল চেকপোষ্টে তার কাছ থেকে বিমান, ট্রেন এবং মোবাইল ফোন কেনার সকল কাগজপত্র রেখে দেয়। এসময় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে সিমটিও রেখে খালি সেটটি দিয়ে দেয়।
পরে বেনাপোল পাড় হয়ে বাংলাদেশের অংশে আসলে পুলিশ তার পাসপোর্টসহ কাগজপত্র দেখতে চায়। কিন্তু ফিরোজ তখন কিছুই দেখাতে পারেনি। এসময় তার বাড়ির লোকজন সেখানে উপস্থিত আছে এবং তার কোন এক নিকটাত্মীয় কাষ্টমসে চাকুরি করে তার রেফারেন্স দেয়। এবং মহিপুর থানায় তার নিখোজ হবার জিডির কপি দেখায় পুলিশকে। পরে ইমিগ্রেশন ইনচার্জ মহিপুর থানার সাথে যোগাযোগ করে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে ফিরোজকে।
ভারতের চেন্নাই শহরে নৌ-বাহিনীর হেফাজতে থাকার একদিন পর একটি মোবাইল ফোন কিনে দেওয়াসহ বিমানযোগে কোলকাতা পৌঁছাবার যাবতীয় ব্যবস্থা করেন তারা। এরমধ্যে ফোন ক্রয়ের ক্যাশমেমো, সিম সংগ্রহ এবং বিমান ও ট্রেনে যাত্রী হিসেবে বেনাপোল সীমান্তে পৌঁছানো পর্যন্ত যেসব কাগজপত্র তাঁর হাতে থাকবার কথা এর কিছুই দেখাতে পারেন নি ফিরোজ।
এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা জেলে ফিশিং ট্রলার মাঝি সমবায় সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি বলেন, লবাণাক্ত সমুদ্রের পানিতে ৫/৬ ঘন্টা কেউ ভাসমান থাকলে চেহারা ও ত্বকের দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু ফিরোজের বেলায় তার কোন কিছুই স্পষ্ট ছিলনা। পুলিশের ধারণা, রহস্যজনক কারণে ফিরোজ নিখোঁজের গল্প সাজিয়ে থাকতে পারে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি বিএম কামাল হোসেন জানান, আমাদের কাছে ফিরোজ শিকদারকে পাঠানো হয়েছে ইমিগ্রেশন থেকে তাকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য। সেই অনুযায়ী আমরা ফিরোজ শিকদারকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। তার কাগজপত্র বা পাসপোর্ট ছিল কিনা সেটি দেখার বিষয় ইমিগ্রেশন পুলিশের আমাদের না। ইমিগ্রেশন পুলিশই ভাল বলতে পারবে কিভাবে ফিরোজ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছে।
বেনাপোল ইমিগ্রেশন ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোঃ ইলিয়াস জানান, ইমিগ্রেশনে তাকে আটকানোর পর আমরা তাকে জিঙ্গসাবাদ করেছি। সে বলেছে ওপারের একটা লোক তাকে দিয়ে গেছে। এখন কোন লোক কিভাবে তাকে দিয়ে গেছে সেটি ফিরোজই বলতে পারে। আমার দায়িত্ব ছিল তাকে পোর্ট থানায় পাঠানো, আমি সেখানে পাঠিয়েছি।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল খায়ের বলেন, ফিরোজ কুয়াকাটা সৈকতে এসে এরপরে সাগরে ভেসে গিয়েছেন কীনা সেটি স্পষ্ট না হলেও বেনাপোল সীমান্ত থেকে মহিপুরে এসেছেন এটি সত্য। তবে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে পরবর্তী আইনগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উল্লেখ্যঃ গত ২৭ মে ফিরোজ সিকদার বন্ধুদের সাথে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয়। এরপর অনেক খোঁজাখুজির পর ফিরোজকে পাওয়া যায়নি। ফিরোজের বাড়ি গলাচিপা থানার আমখোলা গ্রামে। তার বাবার নাম মিলন সিকদার।