কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: মাঘের তীব্র শীতে কাঁপছে উত্তরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রামের মানুষ। উত্তরের হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় দূর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী, খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষজন। শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত টানা তিন দিন মাঝারী ধরনের শৈত্য প্রবাহের পর তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারী) কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। এতে করে সকাল ৯টার রিপোর্টে কুড়িগ্রাম জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে জানিয়েছে রাজারহাট আবহাওয়া অফিস কর্তৃপক্ষ।
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, টানা তিন দিন মাঝারী ধরনের শৈত্য প্রবাহের পর আজ (১ ফেব্রুয়ারী) কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। যা আগামী ৩-৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত অব্যাহত থাকার পর বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এবং বৃষ্টি পরবর্তী পুনরায় শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
শীত বস্ত্রের অভাবে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়ছেন জেলার সাড়ে চার শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের মানুষ সহ ছিন্নমুল শিশু ও মানুষেরা। একই পরিস্থিতি নদ-নদী সংলগ্ন বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষজনেরও। শীতে গবাদি পশু গুলিকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। শীত উপেক্ষা করেই জীবন জীবিকার সন্ধানে ছুটে চলছেন শ্রমজীবী মানুষজন।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঘোড়ার গাড়ি চালক মজিদ মোল্লা জানান, “ঠান্ডায় ঘোড়ার গাড়িতে খুবই কষ্টে হচ্ছে তার। কনকনে ঠান্ডায় ঘোড়া দৌড়াতে চায় না। কিন্তু ঘোড়াকে খাওয়াতে তার প্রতিদিন তার ১০০-১৫০ টাকা লাগে। অায় না করলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে বলে জানান তিনি”।
কাজের সন্ধানে শহরমুখী রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক, ঘোড়ার গাড়ি চালক, দিনমজুর ও ব্যবসায়ীদের কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করেই দূর্ভোগ নিয়েই শহরে আসতে দেখা গেছে। শীত বস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন চরাঞ্চল সহ বাঁধ সমুহে আশ্রয় নেয়া মানুষজন।
জেলা সদরের পাটেশ্বরী এলাকার রিকশা চালক আয়নাল হক জানান, ঠান্ডায় কয়েক দিন ধরে জ্বর, সর্দিতে ভোগায় রিকশা নিয়ে বের হতে পারেননি তিনি। ঋনের টাকায় রিকশা কিনেছেন। কিস্তি পরিশোধ ও পরিবারের খাবারের যোগান দিতে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘রিকশায় চড়ে কাপড় ভেদ করে শরীরে ঠান্ডা শির শির বাতাস অনুভব হচ্ছে। ঠান্ডায় কষ্ট হলেও আমাকে কিস্তির টাকা ম্যানেজ করতে হবে”।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, জেলার নয়টি উপজেলার শীতার্তদের জন্য এক কোটি আট লাখ টাকার কম্বল ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে আসা ৩৫ হাজার ৭০০ কম্বল পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আরও প্রায় ছয় হাজার সোয়েটার ও পাঁচ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে।