কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: ধানি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। মোট কথা জেলার মানুষদের জীবিকা কৃষি নির্ভর। জেলার নাগেশ^রীতে এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অনেক কৃষক। এবারে পাঁচ দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এই কৃষিতে। ধার-দেনা-ঋণ করে করা আমন আবাদের এমন ক্ষতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। নিজেদের খাবারতো জুটবেই না খাদ্যাভাবে পড়বে পোষা গরুও। এ অবস্থায় সরকার সহায়তা না করলে আগামী মৌসুমে জমি পরিত্যক্ত থাকারও শঙ্কায় কৃষক। অবশ্য কৃষি বিভাগ বলছে অবশিষ্ট জমিতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে দপ্তরে। বলা হচ্ছে ধানের এলাকায় বন্যার চোটে দিশেহারা কৃষক।
১৬ নদ-নদীর জেলা কুড়িগ্রাম। আর এই ১৬টি নদীই ভারত থেকে নেমে আসা। বড় নদী ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও শঙ্কোষও এসেছে ভারত থেকে। এবার ভারতে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানিতে জুন মাস থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পরপর পাঁচ দফা বন্যায় কুড়িগ্রামের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়। তলিয়ে যায় ইরি, আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, কাউন, চিনা, তিল ও মরিচসহ চিনাবাদাম ও সবজি ক্ষেত। এসব ফসলের ক্ষতি কৃষকদের হতাশ করে তুলেছে।
তথ্য বলছে, প্রথম দফা বন্যায় তেমন ক্ষতি না হলেও শেষ দু’দফায় নাগেশরী উপজেলায় ৬হাজার ৫৫হেক্টর আমন আবাদ নিমজ্জিত হয়েছে। এদিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় জেলায় ১৭ হাজার ৫৫৬ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর ১১হাজার ৬শ ৬২হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হয় বলে নিরুপন করে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে আমন বীজতলা ১হাজার ৪শ ৯হেক্টর, আউশ ৫হাজার ২শ ১৭হেক্টর, সবজি ৯শ ৫৩হেক্টর, পাট ৯হাজার ২শ ৩৫হেক্টর, তিল ৩শ ৫হেক্টর, মরিচ ২শ ৫হেক্টর ও চিনা ১শ ৪০হেক্টর ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় এ দুই মিলে ১লাখ ৩৪হাজার ৮শ ৫৮জন কৃষকের মোট ১শ ৪০কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। তৃতীয় দফা বন্যা শেষে জেলার ২৭হাজার ৭শ ৬১জন কৃষককে সবজি বীজ, ১শ ৫টি কমিউনিটি বীজতলা ও শতাধিক ভাসমান বীজতলা এবং ১শ ১২টি ট্রে বীজতলা প্রস্তুত করে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আমন চারা বিতরণ করে কৃষি বিভাগ।
উপজেলার বল্লভেরখাষ ইউনিয়নের মাজিয়া বেগম জানান, প্রথম দফার বন্যায় ৪ বিঘা কাউন আবাদ নষ্ট হয়েছে তার। পরে চড়া দামে আমন চারা কিনে ২বিঘা জমিতে লাগানোর পর বন্যায় আবারও নষ্ট হয়। সামনের দিনগুলোতে কেমনে চলবে পরিবার এ দুশ্চিন্তায় দিন কাটে তার। কচাকাটার কৃষক আব্দুল বাতেন জানান, ‘প্রথম বন্যায় ১৫বিঘা পাট নষ্ট হয়। পরে ধানও পঁচে যায়। অনেক ঋণে পড়েছেন তিনি। ফসল নেই শোধ কেমনে হবে এ চিন্তায় ঘুম আসে না। বলেন, সরকারি সহায়না না পেলে আাগামী মৌসুমে আবাদ করার সামর্থ্য নেই। সবজি চাষি আতোয়ার জানান, ৩বিঘা মুলা ও লাল শাক অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে। যাতে তার ক্ষতি প্রায় ৩০হাজার টাকা।
কৃষি বিভাগের সহায়তা ও নিজেদের চেষ্টায় আমন চাষ পূনরায় শুরু করে কৃষকরা। ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার স্বপ্ন নিয়ে নতুন করে আমনের চারা লাগানোর পর আবারও অতি বৃষ্টিতে শুরু হয় বন্যা। সেপ্টেম্বর মাসে দুই দফা বন্যা একই সাথে ভারি বৃষ্টিতে নিচু এলাকার আমনের আবাদ আবারও তলিয়ে গেলে উঠতি আমন ধানের চারা পানির নিচে তলিয়ে থাকায় অনেক আবাদ পঁচে নষ্ট হয়। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে চতুর্থ ও পঞ্চম দফা বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। তবে সেপ্টেম্বরের দুই দফায় ১৯হাজার ২৩হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
কৃষি বিভাগ বলছে নাগেশ^রী উপজেলায় ৬হাজার ৫৫হেক্টর আমন আবাদ নিমজ্জিত হয়। এখনও অনেক আবাদ পানির নিচে রয়েছে। পানি নামার পর থেকে ক্ষতি নিরূপণ করতে কাজ করছেন তারা। তবে এবারে ক্ষতির পরিমান বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় মুলধন হারানোর শঙ্কায় থাকা কৃষকরা বলছেন সরকারীভাবে সহায়তা না পেলে আগামী মৌসুমে কোন আবাদই তারা করতে পারবেনা না অর্থের অভাবে। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামীতে সরিষায় জোর দেওয়া হবে। কৃষকদের সহযোগিতার জন্য দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। এদিকে সরকারি প্রণোদনা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থরা।