সুজন কুমার কর্মকার, কুষ্টিয়া থেকেঃ কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের এক ইউপি সদস্য তার পরিবারের সদস্যেদের নামে ভিজিডির কার্ড করে ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় দুস্থ্য দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ সরকারী চাল আআত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। এতে বঞ্চিত হয়েছেন ওই ইউনিয়নের সুবিধা বঞ্চিত দুস্থ মহিলা। দেশের তৃণমূলের সুবিধা বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর খাদ্য সহায়তার প্রকল্পের আওতায় দেওয়া হয় ভিজিডি ও ওএমএস কার্ড। কিন্তু সেই দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ ভিজিডি’র চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে মরিচা ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত (১, ২ ও ৩) নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য শারমিন সুলতানা নিজ নামে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে ইস্যু করা হয় ভিজিডি কার্ড যার ৬নং। ওই ভিজিডি কার্ডের অনুকুলে প্রতি মাসিক ৩০কেজি চালও তুলেন। নিয়ম না থাকলেও চেয়ারম্যান সাহেবের নেক নজর থাকার কোন সমস্যা হয়নি বলে শারমিন সুলতানা স্বীকারও করে বলেন। তবে কিছু মেম্বর তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলার কথা তিনি বলেন।
ওই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বৈরাগীরচর গ্রামের বাসিন্দা জামাল সরদারের (৬০) অভিযোগ, ২০১৭ সালে তার নামে (ওএমএস) ১০ টাকা কেজি দরে চালের কার্ড ইস্যু হয়। কিন্তু সে কার্ড অদ্যাবধি হাতে পায়নি। তাকে জানানোও হয়নি ওই কার্ডের বিষয়ে। তিনি বলেন, কয়েকদিন পূর্বে এলাকায় আর্মির লোক এসেছিলো খাদ্য সহায়তা দিতে। তাই দেখে ভয়ে মহিলা মেম্বর শারমিন সুলতানা আমার বাড়িতে এসে কার্ডটি পৌঁছে দেয়। কিন্তু ওই কার্ডে তিন বছর ধরে টিপসই দিয়ে চাল তুলে খাইছে সে। আমি ওই কার্ড নিতে চাইনি তবুও শারমিন মেম্বর জোর করে বাড়িতে কার্ড রেখে যায়।
২নং ওয়ার্ডের ভুরকাপাড়া গ্রামের জিয়ারুল ইসলামের স্ত্রী মানছুরা খাতুনের অভিযোগ, ২০১৯ সালের জানুয়ারী মাসে তার নামে ইস্যু করা ৪নং ভিজিডি কার্ড হলেও আজও তা হাতে পায়নি সে। গত ১৫ মাস ধরে প্রতি মাসে ৩০কেজি করে চাল ওঠানো হয়েছে তার নামীয় কার্ড থেকে। দুই বছর আগে মহিলা মেম্বর শারমিন সুলতানা ভিজিডির কার্ড করে দেয়ার কথা বলে আমার ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়েছিলো। ওই কার্ডের জন্য অনেকদিন ধরে ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরলেও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর জানান তার নামে কোন কার্ড হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউপি সদস্য জনান, এখানে নিয়ম অনিয়ম যা কিছুই হোক না কেন মরিচা ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজসেই হয়। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রায় সকল সদস্যই নিজ নামে বা পরিবারের একাধিক সদস্যের নামে ওএমএস ও ভিজিডি কার্ড ইস্যু করে সরকারী চাল নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাসির উদ্দীন তার নিজের স্ত্রী, মা, বোনসহ নিকট আত্মীয়দের নামে ভিজিডি ও ওএমএসএর কার্ড করেছেন স্বীকার করে বলেন, এসব কার্ড যখন আসে তখন চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের সবার মাঝে ভাগ করে দেন।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর বলেন- ইউপি সদস্যের নামে ভিজিডির কার্ড করা যাবে কিনা সেটা আমার জানা ছিলো না। অনেক মেম্বরই না বুঝে এমনটি করেছে। তাছাড়া নিয়ম না থাকলে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসব কার্ড অনুমোদন দিলেন কিভাবে? এমন পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন চেয়ারম্যান শাহ আলমগীর। এভাবে দেখলে আমার ইউনিয়নের প্রায় সব সদস্যই কোন না কোনভাবে সরকারী এসব নানা সুবিধা নিচ্ছেন। আবার মেম্বররা একে অন্যের বিরুদ্ধে কাদা ছুড়াছুড়ি করছে।
এসব বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ইশরৎ জাহান জানান, কোনো জনপ্রতিনিধি অথবা সরকারি কর্মচারীর নিজ নামে ভিজিডিসহ এ ধরনের কার্ড ইস্যু করার নিয়ম নেই। অস্বচ্ছল হলেও এটি আইনসম্মত নয়। এমন নিয়ম বহির্ভুত কিছু হয়ে থাকলে তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, এ বিষয়ে আমার তেমন কিছু জানাও নেই এবং বলারও নেই। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন। যদি কোন অনিয়ম করে এবং তা প্রমানিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দৌলতপুরের মরিচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ আলমগীরের বিরুদ্ধে করোনা দুঃসময়েও ত্রাণ বিতরণে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে। ভিজিডি কার্ডেও অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। সরকারী ত্রাণ ও দুস্থ্যদের খাদ্য সহায়তার চাল আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর।