কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর মেয়েকে ধর্ষণচেষ্টা করেছে ওয়ার্ডবয় আবুল বাশার। মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নারী ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনরা ওই ওয়ার্ডবয়কে হাতেনাতে আটক করে গণধোলাই দেন। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।
ধর্ষণ চেষ্টাকারী আবুল বাশার (৩৫) চান্দিনা উপজেলার কালেমসার গ্রামের মৃত আবদুল আজিজের ছেলে। তিনি চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত ওয়ার্ডবয়।
হাসপাতালের চিকিৎসাধীন নারী রোগী বলেন, গত ৩১ আগস্ট চিকিৎসার জন্য চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। আমার দেখাশোনা করতে আমার বড় মেয়েও আমার সঙ্গে ছিল। মঙ্গলবার রাত অনুমান ২টা ৩৫ মিনিটের দিকে ওয়ার্ডবয় আবুল বাশার আমার মেয়েকে জাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমার মেয়ের চিৎকার শুনে আমার এবং অন্যান্য রোগীদের ঘুম ভাঙলে ওই ওয়ার্ডবয় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় অন্য রোগীর স্বজনরা এসে তাকে গণধোলাই দেন। আমি ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
একই কক্ষে থাকা রোগী শাহিনা আক্তার জানান, অন্য দিন রাতে ওয়ার্ডে লাইট জ্বালানো থাকে। মঙ্গলবার রাত ১১টার পর ওই ওয়ার্ডবয় এসে লাইট অফ করে দিয়ে সবাইকে ঘুমাতে বলে চলে যায়। রাত অনুমান আড়াইটার দিকে হঠাৎ চিৎকার শুনে আমাদের ঘুম ভাঙলে দেখি ওয়ার্ডবয় দৌড়ে চলে যাচ্ছে। এ সময় মেয়েটির মা পেছন থেকে ওই ওয়ার্ডবয়কে আটক করলে ওয়ার্ডবয় জোরাজুরি করে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করে।
হাসপাতালে ভর্তি অন্যান্য রোগী ও তাদের স্বজনরা অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মহিলা ওয়ার্ডে নারীরা ঘুমিয়ে পড়লে শরীরে কাপড়-চোপড় অনেক সময় ঠিক থাকে না। মহিলা ওয়ার্ডে পুরুষদের আসাই তো ঠিক না। এছাড়া হাসপাতালেই যদি নারীদের সুরক্ষা না থাকে তাহলে আর কোথায় নিরাপদ থাকব? আমরা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
ওয়ার্ডবয় আবুল বাশার জানান, রাত ৮টা থেকে আমার ডিউটি ছিল। আমি রাত ১২টার সময় ঘুমিয়ে পড়ি। হঠাৎ চিৎকার শুনে আমি বের হলে তারা (রোগী ও তাদের স্বজনরা) আমাকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার উল্যাহ জানান, রোগীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ব্যাপারে আমরা জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) ডা. হাছিনা আক্তারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ওসিকে বিষয়টি অবহিত করেছি।
চান্দিনা থানার ওসি শামসউদ্দীন মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, প্রাথমিক তদন্তে যৌন হয়রানির বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, এ বিষয়ে জানার পর তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উৎসঃ যুগান্তর