কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গড়াই নদী খনন প্রকল্পের ড্রেজিংয়ের বালুতে অর্ধশত বসতবাড়ি চাপা পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বাড়িঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের বহলা গোবিন্দপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন অসতর্কতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
দেশের উপকুল ভাগ তথা সুন্দরবন এলাকায় মিঠা পানির সরবরাহ বাড়াতে কুষ্টিয়ায় গড়াই নদী খনন চলছে বেশ কয়েক বছর ধরে। বর্তমানে জেলার কুমারখালী এলাকায় একটি ড্রেজিং মেশিনে খনন কাজ চলছে। প্রকল্প সংশ্লি¬ষ্টরা জানান, কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের বহলা গোবিন্দপুর এলাকায় নদীর পাশেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেশ কয়েকটি পুকুর রয়েছে। এ পুকুরের আশেপাশে অনেকগুলো ছিন্নমূল মানুষ কাঁচা ও আধাপাকা বাড়ি ঘর তৈরি করে কয়েক বছর ধরে বসবাস করে আসছেন।
পাউবো কর্মকর্তাদের দাবি, নদীর অদূরে পুকুর থাকায় ওই এলাকায় নদী ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দেয়। এ কারণে, তারা ড্রেজিং এর বালু দিয়ে ওই পুবুরগুলো ভরাটের উদ্যোগ নেন। তবে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাইপ লাইনের মাধ্যমে ফেলা বালু পুকুর ভরাটের পাশাপাশি মানুষের বাড়ি ঘরে ঢুকে পড়েছে। এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অন্তত পক্ষে ৪৬টি কাঁচা ও আধাপাকা বাড়ির কোনটির জানলা অবদি আবার কোনটির টিনের চালা পর্যন্ত বালুর নিচে চাপা পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাদের বিনা নোটিশে উচ্ছেদের লক্ষে কর্তৃপক্ষ রাতের আঁধারে ড্রেজিং চালিয়ে তাদের বাড়ি ঘর বালুতে ডুবিয়ে দিয়েছে। এমনকি নিজস্ব জমিতে তৈরি করা বেশ কয়েকটি বাড়িও বালুর নিচে চাপা পড়েছে। এলাকার একটি গোরস্থান ও একটি ঈদগাহও এখন বালুর নিচে। এছাড়া সেখানকার অনেক ফলদ ও বনজ গাছপালাও বালুতে ঢেকে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সোনাবী খাতুন জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি ৪ ছেলেকে নিয়ে সেখানে বসবাস করে আসছেন। তবে এখন আর নিজের বাড়িতে থাকতে পারছেন না। কোন মতে ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পরিবার নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে তার। একই অবস্থা বৃদ্ধ আালীম শেখের। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, পাউবো কর্তৃপক্ষ তাদের উচ্ছেদের জন্যই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আলীম শেখ অবিলম্বে তাদের পুনর্বাসনের দাবি জানান। চাপড়া ইউপি চেয়ারম্যান মনির হোসেন রিন্টু বলেন, ড্রেজার দিয়ে জলাশয় ভরাট করার কথা। কিšুÍ পানি উন্নয়ন বোর্ড খালের পাশে তাদের নিজস্ব সম্পত্তি ছাড়াও জনগণের ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে গড়ে ওঠা বসত বাড়িতে বালু ফেলেছে। বহু মানুষের বাসস্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে।
এদিকে গড়াই নদী খনন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজমীর হোসেন এমন ঘটনার কথা স্বীকার বলেন, কাজ করতে গেলে কিছু সমস্যা হতেই পারে। তবে কাউকে বাড়ি ঘর থেকে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে কাজটি করা হয়নি। তিনি বলেন এ ঘটনায় ইতিমধ্যে একটি কমিটি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলো থেকে বালু অপসরাণের পাশাপাশি কিভাবে তাদের পুনর্বাসন করা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের পাশাপাশি তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।
উৎসঃ মানবজমিন