কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) দুই ছাত্রলীগ নেত্রীর মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের ২০৯ নম্বর রুমে সিনিয়র ছাত্রলীগ নেত্রী আশা আফরিনকে মারধর করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের জুনিয়র ছাত্রলীগ নেত্রী রিফায়েত জাহান উপমা । শনিবার (২৩ জানুয়ারি) রাত ৮ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
‘তুই’ সম্বোধন করার প্রতিবাদ করায় শাখা ছাত্রলীগের উপছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক ও আইসিটি বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রিফায়েত জাহান উপমার হাতে মারধরের শিকার হন লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আশা আফরিন। মারধরের এক পর্যায়ে আশা আফরিন অবচেতন হয়ে পড়েন।
মারধরের শিকার আশার অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই একই কক্ষে অবস্থান করলেও বিভিন্ন সময় জুনিয়রের হাতে দুর্ব্যবহারের শিকার হয়ে আসছেন তিনি। এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ ও শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের জানানো হলেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার রাত ৮টার দিকে হলের লকারের চাবিকে কেন্দ্রকে করে সিনিয়র নেত্রী আশাকে ‘তুই’ বলে সম্বোধন করেন জুনিয়র নেত্রী উপমা। আফরিন এর প্রতিবাদ করলে উপমা তার চুলের মুঠি চেপে মারধর করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আফরিন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে হলে অবস্থানকারী অন্য ছাত্রীদের সহযোগিতায় তিনি জ্ঞান ফিরে পান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে নিজের বিছানার পাশে বইয়ের র্যাক রাখেন আফরিন। এ সময় উপমা র্যাক সরাতে বললে কথা কাটাকাটি হয়। এর সূত্র ধরে রাতে লকারের চাবি নেয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় ওই কক্ষের সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত সিনিয়র ছাত্রলীগ নেত্রী আফরিন বলেন, গত তিন বছর ধরেই আমাকে বিভিন্ন সময়ে হুমকি-ধমকি ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছে উপমা। এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ হল প্রাধ্যক্ষকে বিভিন্ন সময়ে জানানোর পরও কেউ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি। সবশেষ শনিবার সে আমার ওপর হামলে পড়ে। এতে আমি চিৎকার করলে পাশের রুমের মেয়েরা এসে আমাকে উদ্ধার করে।
হল ছাত্রলীগের আরেক নেত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিতে উপমার (উপছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক) পদ থাকলেও তাকে কখনো দলীয় কোনো কার্যক্রমে দেখা যায় না। পদ ব্যবহার করে হলে সে বিভিন্ন সময় প্রভাব খাটিয়ে আসছে।
তবে মারধরের বিষয়ে অস্বীকার করে অভিযুক্ত শাখা ছাত্রলীগের নেত্রী রিফায়েত জাহান উপমা বলেন, এরকম কিছুই হয়নি। মারধরের বিষয় তো পরের বিষয়। আপুর সাথে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল। পরে আমি আপুকে সরি বলেছি। এটি রুমের মধ্যে ছিল, রুমের মধ্যে সমাধান হয়েছে।
ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করে প্রভাব খাটানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরেক নেত্রীর উপর আমি কীভাবে প্রভাব খাটাবো? উনিওতো নেত্রী।
তবে এসব বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, কোনো পক্ষ থেকে আমাদের এ সম্পর্কে জানানো হয়নি। এ বিষয়ে সভাপতির সঙ্গে কথা বলতে পারেন। পরে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন বলেন, আমি এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। হলের বিষয় হলের প্রভোস্ট দেখবে। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসলে আমরা খতিয়ে দেখব।
হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সাদেকুজ্জামান তনু বলেন, ঘটনার সময় আমি বিভাগের কাজে বাইরে ছিলাম। খবর পেয়ে দু’জন আবাসিক শিক্ষককে পাঠিয়েছি। তারা তাৎক্ষণিক সমস্যা সমাধান করে দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজখবর রাখছি।