কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। দু’গ্রুপে সৃষ্টি হয়েছে দ্বন্দ্ব, চলছে অস্ত্রের মহড়া।
শনিবার বিকেল ৩টার দিকে ছাত্রলীগের একটি গ্রপের অর্ধশতাধিক মোটরবাইকে করে দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে এবং বঙ্গবন্ধু হলে প্রবেশ করে। এ সময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর প্রধান ফটক থেকে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার পর্যন্ত মোটরসাইকেল শো-ডাউন করেন তারা। শহিদ মিনার থেকে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে অবস্থান নেয়। এ সময় হলের দিকে ককটেল বিস্ফরণ ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়া হয়। এ সময় সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের (২০১৭ সালের কমিটি) অনুসারীদের বের হয়ে আসতে বলেন। তারা একটি গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা সাবেক সাধারণ সম্পাদক (২০১৫ সালে গঠিত কমিটির) রেজা-ই-এলাহীর পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পাশাপাশি হল প্রশাসনকে সদ্যবিলুপ্ত কমিটির ছাত্রনেতাদের বের করে দিয়ে হল সিলগালা করার জন্য প্রশাসনের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ান।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে আরো জানা যায়, একপর্যায়ে তারা হলের নিচে থাকা সাইকেল ভাঙচুর করে। প্রায় ২০ মিনিট ক্যাম্পাসে অবস্থান করার পর ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দীকী ও হল প্রভোস্টরা এসে তাদের সরিয়ে নেয়। পরে ইলিয়াসের অনুসারীরা তাদেরকে প্রতিহত করতে গেলে তারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করে। এ সময় ইলিয়াসের অনুসারীদের রামদা, হকস্টিক ও লাঠিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র হাতে দেখা যায়। প্রধান ফটকের সামনে এসে তারা প্রক্টরের সাথে বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। ‘ক্যাম্পাস ও প্রধান ফটক বন্ধ থাকার পরও কিভাবে বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে শোডাউন করে’ তারা জানতে চান। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, পুলিশ প্রশাসনের সামনে কিভাবে অস্ত্রসহ বহিরাগতরা শোডাউন দেয়?
রেজা-ই-এলাহী বলেন, কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালকে ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ মিছিল দিয়েছি। কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার বিষয়টিকে ঘোলাটে করার জন্য তারা (ইলিয়াসের অনুসারীরা) বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত করার পরও তারা বিষয়টিকে অস্বীকার করে যাচ্ছে। আর ক্যাম্পাসের যে কেউই আমার নামে স্লোগান দিতে পারে। সবজায়গায় আমার অনুসারী আছে।
শাখা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত হওয়া কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের কালোরাত্রি ছাড়া হলের ভিতরে ঢুকে গুলি করা, ককটেল মারা, পুলিশ এবং প্রক্টরের সামনে দিয়ে ক্যাম্পাস গেইট অতিক্রম করে হলের (বঙ্গবন্ধু) দু’তলায় উঠে যাওয়া, প্রক্টরের পাশেই ককটেল ফোটানো, এগুলো বিরল ঘটনা হয়ে থাকবে। এখানে তিন-চারজন সাবেক ছাত্র এবং একজন রানিং ছাত্র, অটোচালক, সিএনজি চালক, বহিরাগত, বিভিন্ন মামলার আসামিরা ছিল।’
তিনি আরো বলেন, আমরা কুবি প্রশাসনকে বলবো, ছেলেদের দুপুরে ঘুমানোর যদি নিরাপত্তা না থাকে তাহলে এ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া উচিত। প্রশাসনের নিরব ভূমিকার কারণে তাদের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রসহ প্রশাসনের লোকের সামনে কিভাবে ক্যাম্পাসে ঢুকে। যারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে এজাহারভুক্ত মামলা করতে হবে। তা না হলে সব শিক্ষার্থী সাথে নিয়ে আমরা কঠিন আন্দোলনে যাব, দরকার হলে আমরণ অনশন করব।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা প্রভোস্টদেরকে নিয়ে বসেছি এবং ভিসির সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ থাকবে কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমি তাদের সাথে কথা বলতেছি।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত ১১টা ৪৯ মিনিটে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কুবি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তি করা হয়। তবে শুরু থেকে কমিটি বিলুপ্তের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দ্বিধায় পড়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপ। সভাপতির পক্ষ থেকে কমিটি বিলুপ্তের কথা বলা হলেও সাধারণ সম্পাদক বলছেন কমিটি বিলুপ্ত করা হয়নি। এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিবাদমান দু’টি গ্রুপও কমিটি বিলুপ্তি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান করছেন। এতে সংঘাতের সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।