সোলায়মান হাসান: নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় কিশোর গ্যাং ও কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা ও কনসোর্টিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিববার (১৩ জুলাই) বিকাল ৪ টায় উপজেলার মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় অবস্থিত পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির সম্মেলন কক্ষে বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ আলোচনা সভা ও কনসোর্টিয়াম অনুষ্ঠিত হয়।
পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন এর মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনায় ও বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মনির হোসেন এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ করে কিশোর গ্যাংকে নির্মূল কোন ভাবেই সম্ভব নয়। মতবিনিময় সভায় কিশোরদের অপরাধ দমনে করণীয় সম্পর্কে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা, পারিবারিকভাবে ভাল-মন্দ বিষয়ক শিক্ষা দেওয়া, কিশোরদের নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা, পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধূলার ব্যাবস্থা করা, কিশোরদের তার মা-বাবার উচিত পর্যাপ্ত সময় দেওয়া, তাদের সহিত পারিবারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করা, তারা কার সাথে মেলামেশা করে তার খোঁজ খবর নেওয়া, তারা কখন বাসায় ফিরছে, কোথায় কার সাথে ঘোরাফেরা করছে তার খোঁজ খবর নেওয়া। এছাড়া তাদের বিখ্যাত লেখকদের গল্পের বই পড়ায় আগ্রহী করা।
এ সময় বক্তব্য রাখেন, বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মনির হোসেন, ডগাইর রুস্তম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নদীখাল ও পরিবেশ রক্ষার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মাসুম খাঁন, সোনারগাঁ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক তানভীর আহমেদ, ট্যুরিস্ট পুলিশ নারায়ণগঞ্জ জোনের এসআই (নিরস্ত্র) সবুজ কুমার দেব, সোনারগাঁ ফায়ার স্টেশনের স্টোন মাষ্টার সুজন কুমার হাওলাদার, এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশন সোনারগাঁ শাখার সভাপতি, পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক হাজী মো. শাহ্জালাল, এশিয়ান নারী অধিকার নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক তাজউদ্দীন, বিডি ক্লিন সোনারগাঁ এর সমন্বয়ক কামরুজ্জামান রানা, সাংবাদিক মীমরাজ হোসেন, মোক্তার হোসেন প্রমুখ।
সাংবাদিকরা বলেন, বর্তমান সময় কিশোর গ্যাং সমাজের জন্য মারাত্মক এক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের কারণে সমাজ তথা দেশের শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট হচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে, এই গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। উঠতি বয়সের ১৫ থেকে ১৭ বছরের কিশোররা পরিণত হচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ে।
পরিসংখ্যান বলছে এসব কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধমূলক কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করা, ইভটিজিং বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের উদ্দেশ্যে বাজে মন্তব্য করা, একে অন্যের সাথে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হওয়া, ভয়-ভীতি, হুমকি দেওয়া, মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়িত হওয়া ইত্যাদি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে এক বা একাধিক পক্ষের হয়ে বিবাদে জড়িয়ে হতাহতের ঘটনাও ঘটাচ্ছে এসব উঠতি বয়সীরা। এক শ্রেণীর সন্ত্রাসীরা এসব কিশোরদের ব্যবহার করে সংঘটিত করছে নানা অপরাধ মূলক কর্মকান্ড। এক সময় এসব অপরাধের পাশাপাশি মাদকের ভয়াল নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে কিশোররা। তখন মাদকের অর্থের জোগান দিতে নিয়মিত ছিনতাই, চুরি, চাঁদাবাজিসহ ডাকাতির মত বড় বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এসব কিশোররা। প্রতিনিয়ত আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে আটকের পাশাপাশি কারাগার গুলোতে বাড়ছে কিশোর অপরাধীর সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সময় কিশোর অপরাধের ভয়াবহতা যেভাবে বাড়ছে তা প্রতিরোধ করতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নৈতিক ও বাস্তবিক শিক্ষায় প্রশিক্ষণ দিতে হবে।রাজনৈক নেতৃবৃন্দের সদিচ্ছা ও ১৮ বছরের কম বয়সের কিশোদের রাজনৈতিদ কর্মসূচী থেকে বাহিরে রাখতে হবে। তাদেরকে কিশোর অপরাধ, অনলাইন জুয়া, মাদকাসক্ত ও মোবাইলের আসক্তি থেকে ফিরাতে ব্যাপক খেলাধুলা, সুস্থ্যধারার বিনোদনসহ সমাজসেবামূলক কজে বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে।
বিবি আছিয়া ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মনির হোসেন বলেন, কিশোররা যেন তাদের পরিবারের ব্যাধিতে পরিণত না হয়ে ঘরের আলো হয়ে ওঠতে পারে তার ব্যাবস্থা করতে হবে। কিশোররা যেন সমাজের বিষ ফোঁড়া না হয়ে আগামীর ভবিষ্যৎ হয়ে উঠতে পারে সেই উদ্যোগ নিয়ে হবে। তাদের অবহেলা না করে তাদের প্রতি স্নেহ, ভালোবাসা, যত্ন বৃদ্ধি করতে হবে।