
আবু তালহা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যা রানী সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই শিক্ষকদের। শোকজ হওয়ার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। শিক্ষার মান প্রশ্নবিদ্ধ আর বরাদ্দের টাকা পেতে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পকেট ভারি করতে হয় বলে অভিযোগ উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের।
কামারখন্দ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যা রানী সাহা দৌলতপুর, মানিকগঞ্জে শিক্ষা অফিসার থাকা অবস্থায় অদক্ষতা ও অসদাচরণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে ২০২০ সালের জুলাই হতে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত লঘু দন্ড প্রদান করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কামারখন্দ এসেও থেমে নেই তিনি তার বিরুদ্ধে মুখ খুললেই হতে হবে শোকজ না হয় বদলি এমনটাই অভিযোগ শিক্ষকদের।
বর্তমানে ২০২১-২২ অর্থবছরে পিডিইপি-৪ এর আওতায় মাইনর মেরামত এর জন্য উপজেলার ২৭ টি স্কুলে ৫৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। যা প্রত্যেক স্কুল ২ লক্ষ টাকা করে পায়। সেই টাকা দিয়ে হয়েছে ভুরিভোজ আবার অনেক স্কুলে ২০ হাজার টাকার কাজ করেই দেখানো হয়েছে ২ লক্ষ টাকা। কিছু স্কুলে ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার মত কাজ করেছে বাদবাকি টাকা সংশিষ্ট লোকজনের হয়েছে পকেট ভারী।
উপজেলার ৫২ নং চরটেংরাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বারান্দার ৩ টি গ্রীল কেনার হিসাবে দেখান হয়েছে ১ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা যার বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা বাদবাকি টাকার হিসাব নেই। ৫৬ নং ভায়ার চর ও পাকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লক্ষ টাকার হিসাব দেখালেও যে দোকান থেকে জিনিসপত্র ক্রয় করেছেন তার সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় ১ লক্ষ টাকার জিনিস নিয়েছেন তবে তাদের থেকে ব্লাঙ্ক ভাউচার নিয়েছিলেন স্কুলগুলো। এছাড়াও চর কামারখন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার হিসেব দেখান কিন্তু যেখান থেকে ক্রয় করা হয়েছে জিনিসপত্র তাদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় ১ লক্ষর থেকে কিছু বেশি টাকার জিনিসপত্র নিয়েছেন তবে তারা ব্লাস্ক ভাউচার নিয়েছেন। চৌবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তারা কোন কাজে দেখাতে পারেনি অন্যদিকে খামার বরধুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বরাদ্দের টাকায় হয়েছে ভুরিভোজ।
এমনসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন পাকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাহেরা বুলবুলি তিনি জানান, আমাদের ভ্যাট কাটে ২৬ হাজার আর বাকি ১ লক্ষ ৭৪ হাজারের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ হাজার দিতে হয় শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তাদের পকেটে। চর কামারখন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, ২ লক্ষ টাকার মধ্যে ভ্যাট কেটেছে ৩৬ হাজার টাকা কিন্তু ২ লক্ষ টাকার মধ্যে ভ্যাট কাটার কথা ২৬ হাজার। এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিকাংশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা বলেন, জলে থেকে কখনও কুমিরের সাথে যুদ্ধ করা যায় না যার কারণে বর্তমানে শিক্ষা অফিসের অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারিনা। শুধু শিক্ষা অফিস না উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে এস্টিমেট নিতেও ২ হাজার করে টাকা দিতে হয়েছে। এই শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তার জন্য অনেক কষ্টে রয়েছি আমরা তারপরও চাকরির ভয়ে মুখ খুলি না।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পর শিক্ষা অফিস ও ইঞ্জিনিয়ার অফিস কাজ দেখে প্রতিটা স্কুলে বরাদ্দের টাকা দেওয়া কথা। কিন্তু কাজ না করেই কিভাবে ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে প্রত্যায়ন ও শিক্ষা অফিস থেকে বরাদ্দের টাকা পেল স্কুল গুলো এমন প্রশ্নের জবাবে এ সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বলেন এ বিষয়গুলো স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি, ইঞ্জিনিয়ার অফিস ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস বলতে পারবে।
এসকল বিষয় নিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সন্ধ্যারানী সাহাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি আপনাদের সাথে কোন কথা বলবো না আপনাদের প্রশ্নের উত্তর ও দেবো না। আপনারা যা মনে চায় তাই লিখে দেন।