বিশদলীয় জোট সক্রিয় থাকুক বা না থাকুক- বিএনপির নেতৃত্বেই সরকার ‘পতনের’ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ শেষে এ প্রতিশ্রুতি দেন দলটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। এ ছাড়া আন্দোলনের সময় জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একটি কাঠামো তৈরি করার জন্যও বিএনপিকে পরামর্শ দেন তিনি।
কল্যাণ পার্টি ২০ দলীয় জোটে থাকা নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সংলাপ হয়। বিকাল ৪টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম ছিলেন।
আর কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেয়। প্রতিনিধি দলের অন্যরা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস, মিসেস ফোরকান ইবরাহিম, মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন, অতিরিক্ত মহাসচিব নুরুল কবির পিন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান আলী হোসাইন ফরায়েজী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাহমুদ খান, যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ ফেরদৌস সোহেল মোল্লা, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মেহেদী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খান সাদাত এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহিদ আবেদীন।
সংলাপ শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে এবং দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের জন্য কাজ করছে বিএনপি।
আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিদেশে নির্বাসিত তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা এবং ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার আমাদের সবচেয়ে বড় দাবি। এই মুহূর্তে সরকারের পদত্যাগ করা উচিত। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। এরপর নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে তার অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংসদ গঠনের মাধ্যমে একটি সরকার করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবেন, তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন করা হবে। পরবর্তী সময়ে আলোচনার ভিত্তিতেই রাষ্ট্রের সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে হবে। রাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে- বিচার বিভাগ, সংবিধানসহ অন্য বিষয়গুলোর যেসব সংস্কার দরকার, সে সংস্কারগুলো মতৈক্যের ভিত্তিতে আমরা গ্রহণ করব।
সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কল্যাণ পার্টি একমত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোটে ছিলেন না তাদের সঙ্গে সংলাপ, আর যারা জোটে ছিলেন তাদের সঙ্গে সংলাপের ক্ষেত্রে কাঠামোগত কিছুটা পার্থক্য হবেই। আমরা দশটি বছর একসঙ্গে চলছি। আপ্রাণ চেষ্টা করেছি বিএনপির অনুকূলে আন্দোলনে ও বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গায় থাকতে।
তিনি বলেন, বর্তমান একনায়কতান্ত্রিক সরকারকে সরানো- এটা রাজনীতিতে প্রধান অগ্রাধিকার। এটা বাস্তবায়নের জন্য করণীয় হচ্ছে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা। কল্যাণ পার্টি প্রস্তাবে বলেছে, যদি ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করা সম্ভব না হয় যে কোনো কারণে, তাহলে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করতে প্রস্তুত। এটাও বলেছি, জোটকে সক্রিয় করার কাজে অথবা জোটের মধ্যে বিভিন্ন দলকে একত্রিত করতে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আন্দোলন শুরু হলে আরও মতবিনিময় হবে। আমরা প্রস্তাবে বলেছি, জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া যেন দীর্ঘমেয়াদি না হয়, সেজন্য একটি কাঠামো তৈরি করা। আন্দোলন ত্বরিতগতিতে হতে হবে, আন্দোলনে ১২ ঘণ্টা, ৬ ঘণ্টা অনেক দীর্ঘ সময়।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি মেকাপ করতে হলে আমাদের নিশ্চয়ই অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে। আরও সীমাবদ্ধতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সাত হাজার মাইল দূরে রাখা হয়েছে। অতএব, এ দুটি সীমাবদ্ধতাকে মেনে আমাদের আগাতে হবে।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি, আগামী নির্বাচনে নতুন সংসদ যখন হবে, আগে থেকেই জনগণের কাছে আমরা ওয়াদাবদ্ধ থাকব- সংবিধান সংস্কার করতে হবে, প্রয়োজনীয় আরও সংস্কার করতে হবে।
সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলনের ঐক্য গড়তে সংলাপের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে ২৪ মে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে প্রথম সংলাপ করে দলটি। এরপর ২৭ মে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টি, ৩১ মে গণসংহতি আন্দোলন, ১ জুন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেন। পর্যায়ক্রমে বিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে সংলাপ করার কথা রয়েছে বিএনপির।